সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
দীর্ঘ ১০ মাস মহাকাশে ১ কোটি ১০ লাখ কিলোমিটার ওড়ার পর, NASA-এর ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট (DART) সফলভাবে গ্রহাণু ডিমারফোসকে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে আঘাত করে। পৃথিবীর জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন ধেয়ে আসা গ্রহাণু বস্তুর কক্ষপথ পরিবর্তন করে পৃথিবীকে বাঁচাতে এটিই ছিলো বিশ্বের প্রথম কোনো পরিক্ষা।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপ- মহাকাশ উৎসাহীদের বিস্মিত করার এই সুযোগটিকে হাত ছাড়া করে নি। টেলিস্কোপদুটি DART-এর আঘাতকে বিশদ ভাবে ক্যামের্ বন্দি করেছে। এটিই ছিলো গ্রহ প্রতিরক্ষার জন্য বিশ্বের প্রথম মহাকাশ পরীক্ষায়। এছাড়া এই প্রথম ওয়েব এবং হাবল একই সাথে একই কোনো লক্ষ্যবস্তু পর্যবেক্ষণ করলো।
একসাথে, হাবল এবং ওয়েব আমাদের সৌরজগতের গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে সমালোচনামূলক বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
নাসার প্রধান Bill Nelson বলেছেন, “ওয়েব এবং হাবল যা দেখায় তা সময়সময় সত্য হয় বলে দেখে আসছি নাসা তে: আমরা যখন একসাথে কাজ করি তখন আমরা আরও বেশি কিছু শিখি। প্রথমবারের মতো, ওয়েব এবং হাবল মহাকাশের একই লক্ষ্যবস্তুর চিত্র ধারণ করেছে: একটি গ্রহাণু যা সাত-মিলিয়ন-মাইল ভ্রমণের পরে একটি মহাকাশযানের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল। সমস্ত মানবতা অধীর আগ্রহে ওয়েব, হাবল এবং আমাদের গ্রাউন্ড-ভিত্তিক টেলিস্কোপগুলির আবিষ্কারগুলির জন্য অপেক্ষা করছে – DART মিশন এবং তার বাইরেও।”
উভয় টেলিস্কোপ আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের প্রভাব ক্যাপচার করেছে। ওয়েব করেছেন ইনফ্রারেডে এবং হাবল দৃশ্যমান আলোতে।
ডিমারফোসের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য, সংঘর্ষের ফলে নির্গত উপাদানের পরিমাণ এবং এটি যে গতিতে নির্গত হয়েছিল তা সবই ওয়েব এবং হাবলের পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রকাশিত হবে। স্থল-ভিত্তিক টেলিস্কোপ পর্যবেক্ষণের সাথে এই তথ্যটি একত্রিত করে প্রাপ্ত তথ্য বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করবে যে একটি গ্রহাণুর কক্ষপথকে কতটা কার্যকরভাবে পরিবর্তন করা যেতে পারে এমন রকেট পাঠিয়ে।
ওয়েবের পর্যবেক্ষণ:
সংঘর্ষের ঠিক আগ মুহূর্তে ওয়েব আঘাত হানার স্থান পর্যবেক্ষণ করে। তারপরবর্তী কয়েক ঘন্টার মধ্যে বেশ কয়েকবার পর্যবেক্ষণ করা হয়। ওয়েবের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (NIRCam) থেকে একটি আঁটসাঁট, কমপ্যাক্ট কোর দৃশ্যমান যেখানে উপাদানের প্লুমগুলি আঘাত হানার স্থান থেকে দূরে ছড়িয়ে যাওয়া দেখা যাচ্ছে।
ক্রেডিট: NASA/ESA/CSA/Cristina Thomas (Northern Arizona University), Ian Wong (NASA-GSFC)/Joseph DePasquale (STScI)
ওয়েব দিয়ে আঘাত গ্রহাণুর পর্যবেক্ষণ করা ওয়েব দলকে এক চ্যালেঞ্জের সামনে উপস্থাপন করেছিলো। ওয়েবের জন্য সেট করা মূল গতি সীমার চেয়ে তিনগুণ বেশি দ্রুত গতিতে চলা গ্রহাণুকে ট্র্যাক করাতে সক্ষম হয়েছে। DART যখন তার লক্ষ্যের কাছাকাছি আসাছিলোর তখন ওয়েব দলটি বেশ অতিরিক্ত কাজ করেছে যাতে ওয়েব ট্র্যাক করতে পারে এবং শেষে তারা এই সফলতার মুখ দেখেছে।
ফ্ল্যাগস্টাফ, অ্যারিজোনার উত্তর অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির প্রধান ইনভেস্টিগেটর Cristina Thomas বলেছেন, “ওয়েব মিশন অপারেশনের লোকদের জন্য আমার কাছে অসাধারণ প্রশংসা ছাড়া আর কিছুই নেই যারা এটিকে বাস্তবে পরিণত করেছে৷ আমরা বছরের পর বছর ধরে এই পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছি, তারপরে সপ্তাহ ধরে বিস্তারিতভাবে, এবং আমি অত্যন্ত খুশি যে শেষর কাজটি ফলপ্রসূ হয়েছে।”
হাবলের পর্যবেক্ষণ:
হাবল ডিমারফোসের পৃষ্ঠে DART-এর সংঘর্ষের ১৫ মিনিট আগে এবং তারপরে আবার ১৫ মিনিট পরে পর্যবেক্ষণ করে। হাবলের ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩ (WFC 3) দ্বারা ক্যাপচার করা ছবিটি আঘাতের চিত্রটি দৃশ্যমান আলোতে কেমন দেখাবে তা প্রদর্শন করে।
ক্রেডিট: NASA/ESA/Jian-Yang Li (PSI)/Alyssa Pagan (STScI)
ছবিতে দেখা কিছু রশ্মি সামান্য বাঁকা দেখায়, তবে এর অর্থ কী হতে পারে তা নির্ধারণ করতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অবশ্যই আরও দেখতে হবে। হাবল চিত্রগুলিতে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে আঘাতের পরে সিস্টেমের উজ্জ্বলতা তিনগুণ বেড়েছে। এছাড়া ৮ ঘন্টা পরও যে আঘাতকৃত গ্রহাণু উজ্জ্বলতা স্থির তা দেখা যাচ্ছে।
Dimorphous-এর সাথে DART-এর আঘাতের ঠিক আগে এবং পরে হাবল ৪৫টি ছবি ধারণ করেছিল। হাবল আগামী তিন সপ্তাহে আরও ১০ বার Didymos-Dimorphos সিস্টেম নিরীক্ষণ করার পরিকল্পনা করেছে। এই নিয়মিত, অপেক্ষাকৃত দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ যেমন ইজেক্টা ক্লাউড সময়ের সাথে সাথে প্রসারিত এবং বিবর্ণ হয়ে যায়, তেমনভাবে মেঘের নির্গমন থেকে অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত এর সম্প্রসারণের একটি সম্পূর্ণ চিত্র তৈরি করবে।
ক্রেডিট: NASA/ESA/Jian-Yang Li (PSI)/Alyssa Pagan (STScI)
অ্যারিজোনার টাকসনের প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের Jian-Yang Li, যিনি হাবল পর্যবেক্ষণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বলেন, “যখন আমি ডেটা দেখেছিলাম, তখন আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, হাবলের ক্যাপচার করা ইজেক্টের আশ্চর্যজনক বিবরণ দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি এই মুহুর্তের সাক্ষী হতে এবং যে দলটি এটি ঘটিয়েছে তার অংশ হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।”
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।