সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
অবাস্তব সংখ্যা এমন এক ধরনের সংখ্যা যা আমাদের ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। এগুলোকে “অবাস্তব” বা “কাল্পনিক” বলা হয় কারণ বাস্তব সংখ্যার মতো এগুলো কোনো কিছুকে গণনা বা পরিমাপ করাতে ব্যবহার করা যায় না।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্ত সংখ্যা ব্যবহার করি, সেগুলোকে বাস্তব সংখ্যা বলা হয়। যেমন ১, ২, ৩—এগুলো বাস্তব সংখ্যা। ভগ্নাংশ এবং ঋণাত্মক সংখ্যাগুলিও বাস্তব সংখ্যা। বাস্তব সংখ্যাগুলোকে একটি সংখ্যা রেখায় স্থাপন করা যায়।
কিন্তু অবাস্তব সংখ্যা আলাদা। একটি সাধারণ সংখ্যা রেখায় কোথায় অবাস্তব সংখ্যা অবস্থান করবে তা দেখানো সম্ভব নয়। তবে, অবাস্তব সংখ্যা একেবারেই কাল্পনিক কিছু নয়। বাস্তব সংখ্যার মতোই এগুলো যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগ করা যায়।
অবাস্তব সংখ্যা তখনই দরকার হয়, যখন কোনো ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল নির্ণয় করতে হয়। ধনাত্মক সংখ্যার বর্গমূল বের করা সহজ। একটি সংখ্যার বর্গমূল হলো এমন একটি সংখ্যা, যা নিজে নিজের সঙ্গে গুণ করলে মূল সংখ্যাটি পাওয়া যায়। যেমন, ৪ এর বর্গমূল হলো ২, কারণ ২ × ২ = ৪।
কিন্তু ঋণাত্মক সংখ্যার ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন। -৪ এর কথা ভাবুন। এমন কোনো বাস্তব সংখ্যা নেই, যা নিজে নিজের সঙ্গে গুণ করলে -৪ পাওয়া যাবে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে -২ × -২ = -৪ হওয়া উচিত। কিন্তু গাণিতিক নিয়ম অনুযায়ী, দুটি ঋণাত্মক সংখ্যার গুণফল সবসময় ধনাত্মক হয়। তাই, কোনো বাস্তব সংখ্যা দিয়ে ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
এই সমস্যার সমাধান করতে, কয়েকশ বছর আগে গণিতবিদরা নতুন এক ধরনের সংখ্যা সংজ্ঞায়িত করেন—অবাস্তব বা কাল্পনিক সংখ্যা ইংরেজিতে ইমাজিনারি নাম্বার (Imaginary Number)। এদের চিহ্নিত করতে i প্রতীকটি ব্যবহার করা হয়। i দ্বারা -১ এর বর্গমূল বোঝানো হয়। গাণিতিকভাবে এটি এভাবে লেখা হয়—
i = √-1
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি i কে নিজে নিজের সঙ্গে গুণ করা হয়, তাহলে -1 পাওয়া যায়—
i × i = -1
এবং -1 হলো বাস্তব সংখ্যা, অবাস্তব নয়। তাই, অবাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করে কখনো কখনো বাস্তব উত্তরও পাওয়া যায়।
আমরা i ব্যবহার করে -৪ এর বর্গমূল নির্ণয় করতে পারি—
2i = √-4
এখানে 2i একটি অবাস্তব সংখ্যা। এটি একটি প্রতীক বা ধরা-বাঁধা ধারণা। কিন্তু যদি একে নিজে নিজের সঙ্গে গুণ করা হয়, তাহলে -৪ পাওয়া যাবে, যা একটি বাস্তব সংখ্যা।
অবাস্তব সংখ্যা আধুনিক বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে ইলেকট্রিক সার্কিট, তরঙ্গ বিশ্লেষণ, কোয়ান্টাম ফিজিক্স, এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। উদাহরণস্বরূপ: অবাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করে তরঙ্গের গতি ও শক্তি বোঝা যায়, যা মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ওয়াই-ফাই প্রযুক্তির মূল ভিত্তি। MRI স্ক্যানার এবং অন্যান্য চিকিৎসা ডিভাইসে অবাস্তব সংখ্যা ব্যবহৃত হয় সঠিক ছবি তৈরি করতে। আবার ইলেকট্রিক পাওয়ার সিস্টেমের এসি (AC) বিদ্যুৎ বিশ্লেষণে i অপরিহার্য।
মজার বিষয় হলো, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কিছু গাণিতিক সমস্যা শুধুমাত্র কাল্পনিক সংখ্যা ব্যবহার করে সমাধান করা যায়।
——
বিজ্ঞান কথা-র সম্পূর্ণ তালিকা দেখুন
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।