সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
‘লিকুইড ওয়াটার ইন দ্য মার্টিন মিড-ক্রাস্ট‘, এ বছর অগাস্ট মাসে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিএনএএস)’ নামক বিখ্যাত জার্নালের একটি গবেষনা পত্রের হেডলাইন এটি। সোজা কথায় বললে মঙ্গলে জলের হদিস। আজ নতুন নয়, বিজ্ঞানীরা এ সন্ধান করে আসছেন বিগত কয়েক দশক ধরে – জল থাকলেই সেখানে জীবনের একটা সম্ভাবনা থাকবে এই আশায়। অতি সম্প্রতি , ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রাইটের নেতৃত্বে মাইকেল ম্যাগনা ও ম্যাথিয়াস মর্জফেল্ড মঙ্গলের ভূত্বকের গভীরে জলের সন্ধান পান।
মঙ্গলের কথা মাথায় এলেই আমাদের সামনে ভাসতে থাকে খটখটে এক লালচে মরুভূমি। সেজন্যে আমরা নীলগ্রহের বাসিন্দারা এটাকে লালগ্রহও বলি। কিন্ত আমাদের প্রতিবেশী এই গ্রহটি কি চিরকাল এরকম খটখটে ও শুষ্ক ছিল? না, বিজ্ঞানীদের পাওয়া বিভিন্ন তথ্য ও ছবি থেকে জনা যায় সুদূর অতীতে, প্রায় তিন বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গলপৃষ্ঠে নদী, নালা, হ্রদ, বদ্বীপের অস্তিত্ব ছিল, কিন্ত বায়ুমণ্ডলের ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে সে সব শুকিয়ে গেছে। ঠিক কী কারণে এই বিপুল জলরাশি মঙ্গলপৃষ্ট থেকে উধাও হয়ে গেল, বা কোথায় গেছে, সেসব জানার জন্যে বিজ্ঞানীরা আগে এই লালগ্রহে অনেক প্রোব এবং ল্যান্ডার পাঠিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষনা সংস্থা, নাসা ২০১৮ সালে মহাকাশে ‘ইনসাইট ল্যান্ডার’ পাঠায় মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠ, কেন্দ্র সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্যে। ইনসাইটের এই মিশন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছিল। চার বছর ধরে, এই ল্যান্ডারের ভেতরে থাকা সিসমোমিটার (ভূ-কম্পন মাপক যন্ত্র) চুপচাপ মঙ্গলের ভূকম্পন শুনছিল ও লিপিবদ্ধ করছিল। এই সময়ে, ১৩১৯ টিরও বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে সে, যেগুলি বিশ্লেষণ করে মঙ্গল গ্রহের গতি, এর ভূতকের মধ্যস্থ তরল সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেছে গত কয়েক বছরে।
সাধারনত ভূতরঙ্গ বা সিসমিক ওয়েভ কত দ্রুত ভূত্বকের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সেই থেকেই ভূত্বকের প্রকৃতি বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একটা ধারণা পান। রাইটের দলের আর একজন বিজ্ঞানী মাইকেল মাঙ্গের ভাষায়, “পৃথিবী পৃষ্ঠের ওপরেও আমরা এই একই পদ্ধতি ব্যাবহার করে ভূ-অভ্যন্তরে তেলের বা গ্যাসের খনির সন্ধান চালাই “।
সিসমোমিটার থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে রক ফিজিক্সের মডেলে প্রয়োগ করে, রাইট ও তাঁর দল সম্প্রতি জেনেছেন, মঙ্গলের নীচে জলের অস্তিত্বের কথা. মঙ্গলপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ থেকে কুড়ি কিলোমিটার নিচে অবস্থিত এই জল ভান্ডার। কি ভাবছেন ভবিষ্যতে ইসরো মহাকাশ যান পাঠালে ব্যারেল ভর্তি করে নিয়ে আসবেন শ্রী হরিকোটায়? সে গুড়ে বালি! মঙ্গলের রুক্ষ পৃষ্ঠ হরেক কিসিমের শিলা, পাথর, নুড়িতে ভরপুর। সেইরকম বিশালকার কিছু আগ্নেয় শিলা বেষ্টিত আছে সেই জলরাশি।
এই বন্দি জলরাশির পরিমাণ একেবারে কম নয়, তা দিয়ে নাকি একটি মহাসাগর তৈরি করা যাবে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এমনকি এই বিপুল জল মুক্ত হলে তা গোটা মঙ্গলের রুক্ষ পৃষ্ঠকে প্লাবিত করতে পারবে। গ্রহবিজ্ঞানী ভাসান রাইট বলেন, “জলবায়ু, পৃষ্ঠ এবং অভ্যন্তরের বিবর্তন বোঝার জন্য মঙ্গলের জলচক্র বোঝা অতি গুরুত্বপূর্ণ”।
জলের সন্ধান তো মিলল, কিন্ত জীবন? ভূপদার্থবিজ্ঞানী রাইট এও উল্লেখ করেন, “জলের উপস্থিতি বোঝায় না যে জীবন আছে, তবে জলকে জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়”।
আদৌ বাসযোগ্য হবে কি মঙ্গলভূমি? সেজন্যে আমরা তাকিয়ে থাকবো বিজ্ঞানীদের দিকে।
———
Liquid water in the Martian mid-crust. Proceedings of the National Academy of Sciences (2024).
DOI: 10.1073/pnas.2409983121
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।