সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
স্টার কোলাবরেশন নামে বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির রিলেটিভিস্টিক হেভি আয়ন কোলাইডার (আরএইচআইসি) এ স্টার ডিটেক্টর ব্যবহার করে অ্যান্টিম্যাটার হাইপারনিউক্লিয়াস, অ্যান্টিহাইপারহাইড্রোজেন-৪ এর প্রথম পর্যবেক্ষণ ঘোষণা করেছে যা এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ভারী অ্যান্টিম্যাটার হাইপারনিউক্লিয়াস। এটি একটি অ্যান্টিপ্রোটন, দুটি অ্যান্টিনিউট্রন এবং একটি অ্যান্টি-ল্যাম্বডা হাইপারন দ্বারা গঠিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবে করা একটি এক্সপেরিমেন্টে পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ভারী “অ্যান্টি-নিউক্লিয়াস” সনাক্ত করেছে। ক্ষুদ্র, স্বল্পস্থায়ী অ্যন্টিনিউক্লিয়াসটি অ্যান্টিপ্রোটন, অ্যান্টিনিউট্রন এবং অ্যান্টি-ল্যাম্বডা হাইপারনের মতো এক্সোটিক অ্যান্টিম্যাটার কণা দ্বারা গঠিত।
নতুন এই এক্সপেরিমেন্ট অ্যান্টিম্যাটার সম্পর্কে আমাদের বর্তমান ধারণাকে আরো শক্তিশালি করেছে। এর মাধ্যমে গভীর মহাকাশে আরেকটি রহস্যময় কণা – ডার্ক ম্যাটার – অনুসন্ধানের পথ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এক্সপেরিমেন্টেে ফলাফল গত ২১শে আগষ্ট, ২০২৪ তারিখে বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে প্রকাশিক হয়।
অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিপদার্থের ধারণা প্রথম আসে ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডিরাকের হাত ধরে। তিনি ইলেকট্রনের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য একটি সঠিক তত্ত্ব দাড় করাচ্ছিলেন এবং তখন তিনি সেখানে “নেগেটিভ এনার্জি”র ইলেকট্রনের অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
পরে বিজ্ঞানীরা এই “নেগেটিভ এনার্জি” অবস্থার জন্য একটি ব্যাখ্যা খুঁজে পান: অ্যান্টিইলেক্ট্রন, বা বিপরীত বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন। ১৯৩২ সালে এক এক্সপেরিমেন্টে অ্যান্টিইলেক্ট্রন আবিষ্কৃত হয় এবং তারপর থেকে বিজ্ঞানীরা একে-একে খুঁজে পান যে সমস্ত মৌলিক কণার নিজস্ব অ্যান্টিম্যাটার রয়েছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়। অ্যান্টিইলেক্ট্রন, অ্যান্টিপ্রোটন এবং অ্যান্টিনিউট্রন মিলে একটি সম্পূর্ণ অ্যান্টিঅটম তৈরি করতো যা দিয়ে আবার অ্যান্টিপ্ল্যানেট এবং অ্যান্টিগ্যালাক্সি তৈরি হওয়ার কথা ছিলো। এদিকে বিগ ব্যাং তত্ত্ব বলে যে মহাবিশ্বের শুরুতে সমান পরিমাণে পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু আমরা যেদিকেই তাকাই, সেখানেই আমরা পদার্থ দেখতে পাই। প্রতিপদার্থ পাওয়া গেলেও তা খুবই গণ্য পরিমাণে। তাহলে বাকি প্রতিপদার্থ কোথায় গেল? এই প্রশ্নটিই প্রায় এক শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম করে এসেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবের রিলেটিভিস্টিক হেভি আয়ন কোলাইডারে অবস্থিত স্টার এক্সপেরিমেন্টে অত্যন্ত উচ্চ গতিতে ইউরেনিয়ামের মতো ভারী পদার্থের কোরগুলিকে একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করানো। এই সংঘর্ষ ক্ষুদ্র, ইনটেন্স ফায়ারবল তৈরি করে যা মহাবিস্ফোরণের পর প্রথম কয়েক মিলিসেকেন্ডে মহাবিশ্বের অবস্থার প্রতিলিপি তৈরি করে।
প্রতিটি সংঘর্ষের ফলে শত শত নতুন কণা উৎপন্ন হয় এবং স্টার এক্সপেরিমেন্ট তাদের সবগুলোকে শনাক্ত করতে পারে। এই কণাগুলির বেশিরভাগই স্বল্পস্থায়ী, তবে কখনও কখনও বেশ আকর্ষণীয় কিছুও খোঁজ মেলে।
স্টার ডিটেক্টরে, কণাগুলি চৌম্বক ক্ষেত্রের গ্যাসে পূর্ণ একটি বড় পাত্রের মধ্য দিয়ে যাবার সময় তাদের দৃশ্যমান পথচিহ্ন ছেড়ে যায়। এই পথচিহ্নের “থিকনেস” পরিমাপ করে এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের কারণে তারা কতটা বাঁকছে তা দেখে, বিজ্ঞানীরা এটি কী ধরনের কণা তা বের করতে পারেন।
পদার্থ এবং প্রতিপদার্থের একে অপরের বিপরীত চার্জ যুক্ত, তাই প্রতিপদার্থের পথগুলি চৌম্বক ক্ষেত্রে বিপরীত দিকে বাঁকবে।
প্রকৃতিতে পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রোটন এবং নিউট্রন দ্বারা তৈরি। তবে, এছাড়াও “হাইপারনিউক্লিয়াস” নামক কিছু তৈরি হতে পারে, যেখানে নিউট্রনের পরিবর্তে থাকে হাইপারন নামক কণা। এই হাইপারন নিউট্রনের থেকে সামান্য ভারী।
বিজ্ঞানীরা স্টার এক্সপেরিমেন্টে যা সনাক্ত করেছে তা ছিল অ্যান্টিম্যাটার তৈরি একটি হাইপারনিউক্লিয়াস যাকে অ্যান্টিহাইপারনিউক্লিয়াস বলা হয়। এটি ছিল এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে ভারী অ্যান্টিম্যাটার নিউক্লিয়াস।
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, এটি একটি অ্যান্টিপ্রোটন, দুটি অ্যান্টিনিউট্রন এবং একটি অ্যান্টিহাইপারন নিয়ে গঠিত যার নাম অ্যান্টিহাইপারহাইড্রোজেন-৪। উৎপাদিত কোটিকোটি কণার মধ্যে, গবেষকরা মাত্র ১৬টি অ্যান্টিহাইপারহাইড্রোজেন-4 নিউক্লিয়াস শনাক্ত করতে পেরেছেন।
হাইপারনিউক্লিয়াস তৈরি হবার পর বেশিক্ষণ থাকে না ন্যানোসেকেন্ডের এক দশমাংশের মধ্যেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়।
হাইপারনিউক্লিয়াসকে তাদের সংশ্লিষ্ট অ্যান্টিহাইপারনিউক্লিয়ার সাথে তুলনা করে, গবেষকেরা দেখতে পান যে তাদের জীবনকাল এবং ভর একই – যা ডিরাকের তত্ত্বের সাথে মিলে যায়।
অ্যান্টিম্যাটারের সাথে ডার্ক ম্যাটারের সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু তত্ত্ব অনুযায়ী দুটি ডার্ক ম্যাটার কণার সংঘর্ষ হলে তারা ভেঙ্গে ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটার কণার তৈরি করবে। এটি তখন অ্যান্টিহাইড্রোজেন এবং অ্যান্টিহিলিয়াম তৈরি করবে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থিত আলফা ম্যাগনেটিক স্পেকট্রোমিটার নামে একটি এক্সপেরিমেন্ট এই অ্যান্টিহাইড্রোজেন এবং অ্যান্টিহিলিয়াম সন্ধান করছে।
যদি আমরা মহাকাশে অ্যান্টিহিলিয়াম পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে আমরা কীভাবে জানব যে এটি ডার্ক ম্যাটার নাকি নরমাল পদার্থদের সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিল? স্টার এক্সপেরিমেন্ট (STAR experiment), লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের এলএইচসিবি (LHCb) এবং এলিস (Alice)-এর মতো এক্সপেরিমেন্টে আমরা জানতে পারি স্বাভাবিক পদার্থের সংঘর্ষে কতটা অ্যান্টিম্যাটার তৈরি হয়। এই তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমরা হয়তো আলাদা করতে পারবো কোনটা ডার্ক ম্যাটার আর কোনটা নরমাল ম্যাটারের সংঘর্ষে তৈরি।
–––
STAR Collaboration. Observation of the antimatter hypernucleus Λ¯4H¯. Nature (2024).
DOI: 10.1038/s41586-024-07823-0
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।