সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ২০১১ সালে আবিষ্কৃত WASP-39b নামক ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের খোঁজ পেয়েছে। এটিই প্রথম কোনও এক্সোপ্ল্যানেটে পাওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড। পর্যবেক্ষণটি দূরবর্তী বিশ্বের মধ্যে একটি রহস্যের ইঙ্গিতও প্রকাশ করেছে।
WASP-39b বিশাল আকারের গ্রহ। এর ভর শনির সমান এবং ব্যাস বৃহস্পতির ১.৩ গুণ। এটি তার নক্ষত্রের কাছাকাছি প্রদক্ষিণ করে, এবং গড় তাপমাত্রা প্রায় ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উচ্চ তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলকে JWST এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ সহজ করে তোলে।
যখন একটি নক্ষত্র থেকে আলো একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে আলোকিত হয়, তখন বায়ুমণ্ডলের অণুগুলি অনন্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেঞ্জে কিছু আলো শোষণ করে।
কার্বন ডাই অক্সাইড ইনফ্রারেড আলো শোষণ করে। পূর্ববর্তী টেলিস্কোপগুলি সঠিক পরিসরে বাছাই করার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করেনি। অন্যদিকে JWST ইনফ্রারেডে পর্যবেক্ষণ করে, এবং এর ফলে সহজেই কার্বন ডাউ অক্সাইড শনাক্ত করতে পেরেছে। JWST ইনফ্রারেড রশ্মি পর্যবেক্ষণ করে বিধায় এটি খুব আলোক সংবেদী।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, সান্তা ক্রুজের Natalie Batalha এবং ১০০ জনেরও বেশি গবেষকের একটি দল JWST পর্যবেক্ষণগুলি পরীক্ষা করে। তারা চারটি পৃথক অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সেগুলি পরিচনালনা করে; নিশ্চিত করার জন্য যে সেগুলি যেভাবেই প্রক্রিয়া করা হোক না কেন, ফলাফল একই হয়। চারটি অ্যালগরিদমই কার্বন ডাই অক্সাইডের স্পষ্ট স্বাক্ষর দেখিয়েছে। “কার্বন ডাই অক্সাইড স্বাক্ষর কেবল আমাদের দিকে চিৎকার করছিল,” Batalha বলেছেন। “ডেটা প্রক্রিয়া করা কঠিন ছিল না – এটি সহজ ছিল, সোজা ছিল, এবং সত্যই সুন্দর ছিল।”
ফলাফলটির ২৬ সিগমার একটি পরিসংখ্যানগত তাৎপর্য রয়েছে, যার অর্থ পরিসংখ্যানগত ফ্লুক (statistical fluke)-এর মতো একটি সিগনেচার খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ১০১৪৯-এর মধ্যে ১-এর কম।
গবেষণা দলের একজন এবং মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Eliza Kempton বলেন,
“এটি কেবলই দুর্দান্ত। আমি এই ক্ষেত্রে ২৬ সিগমার ফলাফল কোনদিন দেখিনি।”
গবেষকরা দেখতে পান যে, WASP-39b গ্রহে তার নিজের হোস্ট নক্ষত্রের চেয়ে বেশি কার্বন এবং অক্সিজেন রয়েছে, যার অর্থ হলো নক্ষত্রের চারপাশে গ্যাস একবারে ভেঙে পড়ে এর বায়ুমণ্ডল তৈরি হয় নি, বরং এর পাথুরে কোরটি প্রথমে তৈরি হয়েছে এবং তারপরে এর বায়ুমণ্ডল তৈরি হয়েছে। এটি আমাদের নিজস্ব সৌরজগতের গ্রহগুলি যেভাবে তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি তার অনুরূপ এবং এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডলকে আরও বিশদে অধ্যয়ন করলে এটি কীভাবে এবং কোথায় গঠিত হয়েছিল সে সম্পর্কে আরও বিশদ জানা যাবে।
কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়াও, গবেষকরা তাদের ডেটাতে আরেকটি সঙ্ঘাত পেয়েছেন, যা ইঙ্গিত করে যে WASP-39b এর বায়ুমণ্ডলে কিছু অপ্রত্যাশিত কণা কিছু নক্ষত্র আলো শোষণ করছে। Kempton-এর মতে সেখানে অন্য কিছু আছে; অন্য কোনো অণুর মেঘ বা কুয়াশা – এমন কিছু যা এক্সোপ্ল্যানেট বায়ুমণ্ডলের বেসিক মডেল দ্বারা প্রডিক্ট করা যায়নি। গবেষকরা এখনও নিশ্চিত নন যে এই রহস্যের অণু কী হতে পারে, তবে তারা JWST এবং বিভিন্ন মডেলের অতিরিক্ত ডেটা দিয়ে এটি বের করার জন্য কাজ করছে।
———
Identification of carbon dioxide in an exoplanet atmosphere. Nature (in press), 2022 [abstract]
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।