সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
সাপের বিষ হল শত-শত যৌগের মিশ্রণ যা স্নায়ু কোষ, রক্ত এবং টিস্যুকে লক্ষ্য করে তাদের কাজের ব্যাঘাৎ ঘটায়। সারা বিশ্বে বছরে আনুমানিক ৮১,০০০ থেকে ১৩৪,০০০ মানুষ মারা যায় বিষাক্ত সাপের কামড়ে। এছাড়াও পঙ্গু হয় আরও কয়েক হাজার মানুষ। সাপের কামড়ের সবচেয়ে প্রচলিত এবং কার্যকরী চিকিৎসা হল অ্যান্টিভেনম। এই অ্যান্টিভেনম হলো কিছু অ্যান্টিবডির একটি মিশ্রন যা ঘোড়া বা ভেড়ার শরীরে নন-লিথাল ডোজ আকারে পুশ করে সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়। অ্যান্টিভেনম জীবন বাঁচালেও এর অনেক সমস্যা রয়েছে।
এর মধে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কোন সাপ কামড় দিয়েছে তা চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেয়া। সাপের বিষ, প্রজাতির মধ্যে অনেক পরিবর্তিত হয়, যার অর্থ চিকিৎসা নির্ভর করে কোন প্রজাতি আপনাকে কামড় দিয়েছে তার ওপর – যা সবসময় জানা যায় না। বিষ, প্রজাতির মধ্যেও পরিবর্তিত হতে পারে; ভারতের এক গবেষণা দল আবিষ্কার করেছে যে, কেউটে বা মনোসেলেট কোবরা (Naja kaouthia) কামড়ানোর পরে ব্যবহৃত একটি অ্যান্টিভেনম ভারতের কিছু অঞ্চলে প্রায় সম্পূর্ণ অকার্যকর।
কিছু ক্ষেত্রে একই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি সাপের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য একক অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়, যার অর্থ তারা একে অপরের বিরুদ্ধে তুলনামূলকভাবে দুর্বল। আফ্রিকাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এক ধরনের অ্যান্টিভেনম ব্ল্যাক মাম্বা (Dendroaspis polylepis) দ্বারা কামড়ানো সাতজনের মধ্যে একজনকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়। এমনও হয়েছে যে কয়েক ডজন অ্যান্টিভেনম পেয়েও মানুষ মারা গেছে।
এছাড়াও, যেহেতু এই অ্যান্টিভেনম ঘোড়া বা ভেড়ার মতো প্রাণীর প্রোটিন থেকে তৈরি, তাই তারা জীবননাশক অ্যানাফিল্যাক্সিস সহ বিরূপ ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণেই ডাক্তাররা প্রায়ই সাপের কামড়ের রোগীর অ্যান্টিভেনম দেওয়ার আগে উপসর্গ দেখা দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
এসব সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষকরা গবেষণা করে চলেছেন দীর্ধদিন ধরে। সম্প্রতি স্ক্রিপস রিসার্চ বিজ্ঞানীরা একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন যা আফ্রিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া জুড়ে পাওয়া বিভিন্ন ধরণের সাপের বিষের মধ্যে মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থের প্রভাবকে আটকাতে পারে।
তারা দেখতে পান যে, মাম্বা, কোবরা এবং ক্রেইট সহ একই প্রজাতির বিষাক্ত সাপের বিষে three-finger toxin (3FTx) নামের প্রোটিন থাকে। দলটি 3FTx প্রোটিনের বিরুদ্ধে পঞ্চাশ বিলিয়ন মানব অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করেন এবং এর মধ্যে ৩,৮০০টি সম্ভাব্য প্রার্থীকে শনাক্ত করেন।
আরও পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে সেই সংখ্যা ৩০টি তে নামিয়ে আনা হয় যার মধ্যে 95Mat5 সমস্ত টক্সিন ভেরিয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
ল্যাবে পরীক্ষায়, 95Mat5 ইঁদুরকে ব্যান্ডেড ক্রেট, ইন্ডিয়ান স্পিটিং কোবরা, ব্ল্যাক মাম্বা এবং কিং কোবরা সহ বিভিন্ন সাপের প্রজাতির বিষ-প্ররোচিত মৃত্যু এবং পক্ষাঘাত রক্ষা করেছে।
এর মাধ্যমে সকল বিপজ্জনক বিষাক্ত সাপের বিষ প্রশমিক করার অ্যান্টিভেনম তৈরির আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা।
———
Synthetic development of a broadly neutralizing antibody against snake venom long-chain α-neurotoxins, Science Translational Medicine (2024).
DOI: 10.1126/scitranslmed.adk1867.
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।