সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
তার নিকটাত্মীয় গুটিবসন্ত ভাইরাসের মতো, মাঙ্কিপক্স (Monkeypox virus) Orthopoxvirus ভাইরাস গণে একটি প্যাথোজেন।
এটি দূষিত দেহ তরল কিংবা সংক্রামিত মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর সাথে ঘনিষ্ঠ মিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস হালকা থেকে গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে – এবং কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলি কী কী?
আক্রান্ত দেহ হতে সুস্থ দেহে সংক্রমণ হবার প্রায় এক বা দুই সপ্তাহ পরে; ভাইরাসটি জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা এবং ক্লান্তির জন্ম দেয়। বেশ কিছু দিন পরে দেহে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে যা সাধারণত মুখের উপর বা চারপাশে জন্মায়। পরবর্তী সপ্তাহগুলিতে সেরে যাবার আগে সেসব ফুসকুড়ি ফোস্কাতে পরিণত হতে পারে।
অনেক দিক দিয়ে গুটিবসন্তের সাথে মিল থাকলেও, মাঙ্কিপক্সকে সৌভাগ্যবশত স্ব-সীমাবদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়.অর্থাৎ এটি নিজে থেকেই থেমে যায় যা এটিকে অনেক কম গুরুতর করে তোলে।
তবুও, মাঙ্কিপক্সকে এখনও একটি গুরুতর অসুস্থতা হিসাবে দেখা হয়; যার ফলে অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে। চিকিৎসা বা টিকা ছাড়া, আক্রান্ত দশজনের মধ্যে প্রায় একজন মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকিতে থাকে, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে।
গুটিবসন্তে ক্ষেত্রে যেখানে প্রতি তিনজনের এতজন গুরুতর আক্রান্ত হয়; সেই ভয়াবহতার সাথে তুলনা করলে মাঙ্কিপক্সকে তেমন সিরিয়াস না। কিন্তু আমরা যদি COVID-19 মহামারী থেকে কিছু শিখে থাকি, সেটা হচ্ছে সম্ভাব্য মারাত্মক ভাইরাসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার পরে ‘দুঃখিত’ হওয়ার চেয়ে আগে নিরাপদ থাকাই ভালো।
মাঙ্কিপক্স কীভাবে ছড়ায়?
মাঙ্কিপক্স ফুসকুড়ি আছে এমন কারো সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের দেহে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ে।
ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ:- মুখোমুখি হতে পারে, ত্বক থেকে ত্বকে হতে পারে, ঠোঁট থেকে ঠোঁটের সাথে বা ঠোঁটের সাথে ত্বকের হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, কারো মুখে আলসার বা ঘা থাকলে সেখানকার ড্রপলেট বা স্বল্প-পরিসরের অ্যারোসলের মাধ্যমেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
আক্রান্ত ব্যাক্তির ততক্ষণ পর্যন্ত সংক্রামক হিসাবে বিবেচিত হয় যতক্ষণ না ব্যাক্তির সমস্ত ক্ষত সেরে যায়। যদিও বিজ্ঞানীদের এখনও সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে হবে।
কোনো পৃষ্ঠতল থেকে মাঙ্কিপক্স সংক্রামিত হতে পারে?
একজন সংক্রামক ব্যক্তি মাঙ্কিপক্স ভাইরাসকে পোশাক, মোবাইল ফোন, টয়লেট সিট, বিছানা ইত্যাদির মতো পৃষ্ঠতলে স্থানান্তর করতে পারে। অন্য কেউ আবার সেসব পৃষ্ঠতল দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, গর্ভাবস্থায় ভ্রূণেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
ভাইরাসটি উপসর্গবিহীন বাহক দ্বারা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে গবেষণা প্রয়োজন।
আমাদের কী মাঙ্কিপক্স মহামারী নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত?
২৩শে জুলাই, ২০২২ -এ, WHO মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবকে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরী হিসাবে ঘোষণা করে। ঘোষণার সময় ৭৪টি দেশে ১৫,০০০টিরও বেশি মাঙ্কিপক্সের কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল।
সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা নিশ্চিত করা উচিৎ কি-না সে বিষয়ে সংস্থার বিশেষজ্ঞরা একমত হতে না পারায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার পড়ে WHO প্রধান Tedros Adhanom-এর উপর।
ক্রেডিট: BSIP SA/Alamy
অতীতে, প্রাদুর্ভাবগুলি মুষ্টিমেয় সংক্রামিত লোকেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, যেহেতু সেসক মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ হতো না। কিন্তু এখন সেই চিত্র আলাদা, যদিও SARS-CoV-2 এর মতো মাঙ্কিপক্স বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। আর মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসের বিরুদ্ধে গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন কার্যকর হওয়ায়, এর সংক্রামন নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকলে কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই তার জন্য প্রস্তুত আছে।
কেন একে ‘মাঙ্কিপক্স’ বলা হয়?
১৯৫৮ সালের দিকে কোপেনহেগেন গবেষণা কেন্দ্রে ল্যাবরেটরি টেস্ট বানরদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা দেয়। বানরের দেহে আবার দেখতে বসন্তের মতো হওয়া এর এই ‘মাঙ্কিপক্স’ নামটি দেয়া হয়।
ভাইরাসের সন্ধান পঞ্চাশের দশকে হলেও ১৯৭০ সালে প্রথম মানব দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সন্ধান মেলে। বেশিরভাগ সংক্রমণ এখনও মধ্য আফ্রিকান দেশে পাওয়া যায়, যদিও প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।
মাঙ্কিপক্স এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে কেন?
২০২২ সালের মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব শিরোনাম হয়ে উঠলেও, আফ্রিকান জনসংখ্যার বাইরে ভাইরাসটি কিন্তু এই প্রথমবারের মতো পাওয়া যায়নি।
২০০৩-এর মাঝামাঝি সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি রাজ্যে মাঙ্কিপক্সের অসুস্থতার ৭১টি ঘটনা সিডিসি-তে রিপোর্ট করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৩৫টি ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছিল যে সেগুলি মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এই সমস্ত নিশ্চিত হওয়া কেসগুলি ইলিনয়ের একটি প্রাণী বিতরণকারীর কাছ থেকে কেনা সংক্রামিত প্রেইরি কুকুরগুলিতে পাওয়া গিয়েছিলো, সেসব কুকুরগুলি আবার ঘানা থেকে আমদানি করা গাম্বিয়ান দৈত্য ইঁদুর এবং ডর্মিস দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল। তো মোটামুটি সেটা আফ্রিকা থেকেই এসেছিলো।
২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে তিনটি মাঙ্কিপক্স কেইস রিপোর্ট করা হয়েছিল। আক্রন্তরা সবাই সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় ছিল, যেখানে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ে।
এর মুখে, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে যাওয়া অসংখ্য সমসাময়িক প্রাদুর্ভাব একটি সম্ভাব্য মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে, বিশেষত বিধ্বংসী SARS-CoV-2 এর সাম্প্রতিক উত্থানের সাথে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি এবং অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বজুড়ে অসংখ্য দেখা-অদেখা সন্দেহভাজন এবং নিশ্চিত হওয়া কেইসগুলি, ব্যাপক সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
সংক্রামিতদের বেশিরভাগই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ফল বলে মনে হয় (সমকামী পুরুষদের মধ্যে)। এই নিবন্ধটি লেখার সময় পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের কারণে কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।