সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
যেসকল রঙিন উপকরণ উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়ায় রং পরিবর্তন করে সেসকল উপকরণ অপটিক্যাল সেন্সিং এবং ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশনের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এমন উপাদান তৈরি এবং ব্যবহারের প্রধান বাধা হলো উৎপাদন কৌশলের অভাব।
MIT-এর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন স্নাতক ছাত্র Benjamin Miller-এর মতে,
“নমনীয় রঙ-পরিবর্তনকারী উপাদান তৈরিতে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য হাই-ইমপ্যাক্ট অ্যাপ্লিকেশন থাকা সত্ত্বেও, মাইক্রোস্কেলে তা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বেশ অভাব রয়েছে।”
কীভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়ে ধাঁধাঁয় থাকার সময় Miller, MIT Museum গিয়েছিলো, যেখানে একজন কিউরেটর হলোগ্রাফির উপর একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে তার সাথে কথা বলেছিলো, তখন কিউরেটর এমন একটি কৌশল ব্যখ্যা করছিলো যা একটি ভৌত উপাদানের উপর দুটি আলোক রশ্মি বীম করে ত্রিমাত্রিক (3D) চিত্র তৈরি করে।
“আমি বুঝতে পারি যে হলোগ্রাফিতে যে ঘটনা ঘটে ঠিক একই ধরনের জিনিস প্রকৃতি কাঠামোগত রঙের সাথে ঘট,”
Miller বলেছে।
সেই পরিদর্শন তাকে হলগ্রাফি এবং এর ইতিহাস পড়তে অনুপ্রাণিত করে, যা তাকে ১৮০০-এর দশকের ইতিহাসে নিয়ে যায় এবং ফ্রাঙ্কো-লাক্সেমবার্গীয় পদার্থবিদ গ্যাব্রিয়েল লিপম্যান দ্বারা উদ্ভাবিত ‘লিপম্যান ফটোগ্রাফি’ নামের প্রাথমিক রঙিন ফটোগ্রাফি কৌশলে সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, গ্যাব্রিয়েল লিপম্যান এই কাজের জন্য ১৯০৮ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জিতেন।
লিপম্যান প্রথমে একটি খুব পাতলা, স্বচ্ছ ইমালশনের (যা তিনি ক্ষুদ্র আলো-সংবেদনশীল বলুকণা থেকে তৈরি করেছিলেন) পিছনে একটি আয়না স্থাপন করে রঙিন ছবি তৈরি করেছিলেন। তিনি সেটআপটিকে আলোর রশ্মিতে উন্মুক্ত করেন, যা আয়নাটি ইমালশনের মাধ্যমে প্রতিফলিত করে ছবি তৈরি করেছিলো।
এই কৌশলটি ব্যবহার করে, লিপম্যান তার ইমালশনগুলিতে ফুল এবং অন্যান্য দৃশ্যের কাঠামোগতভাবে রঙিন চিত্র প্রক্ষেপণ করেছিলেন, যদিও প্রক্রিয়াটি শ্রমসাধ্য ছিল। এই প্রক্রিয়াতে ইমালশনগুলি হাতে তৈরি করা এবং উপাদানটি পর্যাপ্তভাবে আলোর সংস্পর্শে আসার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হতো। এই সীমাবদ্ধতার কারণে, কৌশলটি মূলত ইতিহাসে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
মিলার ভাবলেন, আধুনিক হলোগ্রাফিক উপকরণ ব্যবহার করে লিপম্যান ফটোগ্রাফিকে বড় আকারের, কাঠামোগতভাবে রঙিন উপকরণ তৈরি করতে গতি বাড়ানো যেতে পারে।
গবেষণায়, গবেষকদল স্থিতিস্থাপক, স্বচ্ছ হলোগ্রাফিক ফিল্মকে একটি প্রতিফলিত, আয়নার মতো পৃষ্ঠ (এই ক্ষেত্রে, অ্যালুমিনিয়ামের একটি শীট) যোগার করে । তারপরে তারা ফিল্ম থেকে কয়েক ফুট দূরে একটি অফ-দ্য-শেল্ফ প্রজেক্টর স্থাপন করে এবং প্রতিটি নমুনার উপর ছবি প্রজেক্ট করে।
তারা যেমনটি ভেবেছিলো, ফিল্মগুলি কয়েক মিনিটের মধ্যে বড়, বিশদ চিত্র তৈরি করেছিল, আসল চিত্রগুলিতে রঙগুলিকে স্পষ্ট রেখে।
তারপরে তারা আয়না থেকে ফিল্মটি তুলে এবং সাপোর্টের জন্য এটিকে একটি কালো ইলাস্টিক সিলিকনে আটকে দেয়।
ইলাস্টিক সিলিকনে আটকানো ফিল্মটিকে তারা প্রসারিত করে এবং দেখতে পায় সেটির রঙের পরিবর্তন হচ্ছে।
বিয়ষটি উপাদানটির কাঠামোগত রঙের পরিবর্তনের একটি ফলাফল: যখন উপাদানটি প্রসারিত হয় এবং পাতলা হয়ে যায়, তখন এর ন্যানোস্কেল কাঠামো সামান্য ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত করতে নিজেদেরকে পুনরায় কনফিগার করে। উদাহরণস্বরূপ, লাল রঙের ফিল্মকে প্রসারিত করলে সামান্য পরিবর্তিত ন্যানোস্কেল কাঠামো নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত করে।
দলটি খুঁজে পানে যে ফিল্মের রঙ প্রসারণের সাথে অত্যন্ত সংবেদনশীল। একটি সম্পূর্ণ লাল ফিল্ম তৈরি করার পরে, তারা এটিকে একটি সিলিকন ব্যাকিংয়ের সাথে যেটি বেধে দেখা কোথাও ঘন কোথায় পাতলা তরে। যেখানে ব্যাকিং সবচেয়ে পাতলা ছিল, সেখানে ফিল্মটি লাল রঙের আবং ঘন অংশগুলিতে ফিল্মটি নীল হয়ে গেছে।
একইভাবে, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে লাল ফিল্মের নমুনাগুলিতে বিভিন্ন বস্তু চেপে দিলে বিশদ সবুজ ছাপ ফেলে।
মজার বিষয় হল, রঙিন আয়না তৈরি করার সময় আগত আলোর সাপেক্ষে ফিল্মটিকে একটি কোণে কাত করে তারা লুকানো চিত্রগুলিও প্রজেক্ট করতে পারে। এই কাত মূলত উপাদানটির ন্যানোস্ট্রাকচারগুলিকে আলোর একটি লাল-পরিবর্তিত বর্ণালী প্রতিফলিত করে।
———
Scalable optical manufacture of dynamic structural colour in stretchable materials. Nature Materials (2022). DOI: 10.1038/s41563-022-01318-x
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।