সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স যেমন ভুতুরে ব্যাপার তেমনি বেশ মজারও। এ জগতে সাবঅ্যাটমিক কণার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণ সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হয়। বলা বাহুল্য প্রকৃতির আসল রহস্য এর মধ্যেই। কোয়ান্টাম জগতকে বুঝতে হলে প্রয়োজন কোয়ান্টাম স্কেলে বিশ্লেষণ। এর জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-ই আমাদের একমাত্র ভরসা যার মাধ্যমে প্রকৃতির বিভিন্ন আচরণ সিমুলেট করে তার রহস্য বের করা যেতে পারে। কারণ ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার দ্বারা সেটা সম্বভ না। উদাহরণস্বরূপ, ৪১টি পরমাণু সহ পেনিসিলিন অণুর একটি সিমুলেশন তৈরি করতে একটি ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে 10⁸⁶ টি ট্রানজিস্টরের প্রয়োজন হবে যা এক কথায় অসম্ভব, কারণ 10⁸⁶ সংখ্যাটি পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের মোট পরমাণুর যোগফলের থেকেও বড়। কিন্তু এই কাজটি একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে করতে শুধুমাত্র ২৮৬টি কিউবিট (কোয়ান্টাম বিট)-এর একটি প্রসেসরের প্রয়োজন হবে।
নতুন এই আবিষ্কারের ল্যান্ডমার্কটি নয় বছর তপস্যার ফল ছিলো; অবশেষে সফলতা। SQC প্রতিষ্ঠাতা এবং বিখ্যাত কোয়ান্টাম পদার্থবিদ মিশেল সিমন্স নতুন এই আবিষ্কারটি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সিমন্স এবং তার দল শুধুমাত্র একটি কার্যকরী কোয়ান্টাম প্রসেসর তৈরি করেনি, তারা সফলভাবে একটি ছোট অণুর মডেলিং করে পরীক্ষা করেছে। পরিক্ষাতে প্রতিটি পরমাণুর একাধিক কোয়ান্টাম অবস্থা ছিলো।
আমাদের প্রকৃতিতে যেহেতু সবকিছু কোয়ান্টাম স্কেলে ঘটে থাকে। তাই এই অর্জনটি এখন আমাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে বলে আশা করা যায়।
১৯৫০ এর দশকে, রিচার্ড ফাইনম্যান বলেছিলেন,
প্রকৃতি কীভাবে কাজ করে সেটা আমরা কখনই বুঝতে পারবো না – যদি না আমরা একই ভাবে একই স্কেলে কল্পনা এবং পরিক্ষা করতে না পারি।
যদি কোয়ান্টাম স্তরের ম্যাটারিয়ালকে ভালোভাবে বুঝতে শুরু করে পারেন বিজ্ঞানীরা তাহলে সেটাকে ব্যবহার করে প্রকৃতির বিভিন্ন রহস্য উৎঘটানের সিমুলেশন চালাতে পারবেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে: কোয়ান্টাম স্কেলে কীভাবে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
নতুন আবিষ্কারটি ২০১২ সালে একই দলের আবিষ্কৃত প্রথম কোয়ান্টাম ট্রানজিস্টরের উত্তরসূরি। ট্রানজিস্টর হল একটি ছোট ডিভাইস যা ইলেকট্রনিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করে। প্রচুর ট্রানজিস্টর একসাথে করে তৈরি করা হয় ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আইসি বা প্রসেসর। এবার বিজ্ঞানীদের নতুন এই অবিষ্কারের প্রক্রিয়াকে সহজে বর্ণনা করে যাক।
ক্রেডিট: Silicon Quantum Computing (SQC)
গবেষকরা সাব-ন্যানোমিটার নির্ভুলতার সাথে কোয়ান্টাম ডট স্থাপন করতে একটি আল্ট্রা-হাই ভ্যাকুয়াম (UHV)-এ একটি স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ (STM) ব্যবহার করেন। প্রতিটি কোয়ান্টাম ডট স্থাপন একদম সঠিক হওয়া দরকার যাতে সার্কিটটি কীভাবে ‘ইলেক্ট্রন একটি পলিঅ্যাসিটিলিন অণুতে একক এবং দ্বি-বন্ধনযুক্ত কার্বনের একটি স্ট্রিং বরাবর চলে’ সেটা অনুকরণ করতে পারে।
সবচেয়ে জটিল অংশ ছিলো: প্রতিটি কোয়ান্টাম ডটে ফসফরাসের ঠিক কতগুলি পরমাণু থাকা উচিত; প্রতিটি বিন্দু ঠিক কত দূরে থাকা উচিত সেটার সঠিক তথ্য জানা। এবং সাথে এমন একটি মেশিন তৈরি করা যেটা সিলিকন চিপের ভিতরে একদম সঠিক বিন্যাসে ক্ষুদ্র ডটগুলো স্থাপন করতে পারে।
গবেষকদের মতে, যদি কোয়ান্টাম ডটগুলি খুব বড় হয় তবে দুটি বিন্দুর মধ্যে ইন্টরঅ্যাকশন স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুবই কঠিন হয়ে যায়। আবার যদি বিন্দুগুলি খুব ছোট হয়, তবে তারা আবার এলোমেলোতার পরিচয় দেয়।
চূড়ান্ত কোয়ান্টাম চিপে ১০টি কোয়ান্টাম ডট রয়েছে, প্রতিটি অল্প সংখ্যক ফসফরাস পরমাণু নিয়ে গঠিত।
পরিক্ষার জন্য Polyacetylene বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ এর মডেল আমাদের কাছে পরিচিত এবং তাই এটি প্রমাণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে যে কম্পিউটারটি সঠিকভাবে অণুর মাধ্যমে ইলেকট্রনের গতিবিধি অনুকরণ করছে কী-না।
ক্রেডিট: Ben Mills/Wikimedia Commons
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোয়ান্টাম ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট কেন এত বড় একটা আবিষ্কার?
– কারণ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য কোয়ান্টাম প্রসেসর প্রয়োজন। আর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সুবিধা এক কথায় অসীম। আমরা এখন অনু-পরমানুর আচরণ অর্থাৎ কীভাবে কাজ করে তা সঠিকভাবে জানি না। চিন্তা করুন সেসব যদি সঠিকভাবে জানতে পারি তাহলে কতশত সম্ভবনার দুয়ার খুলে যাবে?
প্রথম ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয়েছিল ১৭৪৭ সালে। প্রথম ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা প্রসেসর ১৯৫৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রথম ট্রানজিস্টর তৈরি করা হয়েছিল ২০১২ সালে, এখন ২০২২ এ এসে তৈরি হলো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, ব্যবধান ৯ বছর। তাহলে বলাই বাহুল্য যে, শতগুণ জটিল হওয়া সত্তেও ২ বছর এগিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অগ্রগতি।
———
Engineering topological states in atom-based semiconductor quantum dots. Nature 606, 694–699 (2022). https://doi.org/10.1038/s41586-022-04706-0
প্রতিদিন আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।