সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গত ১৬,০০০ বছর ধরে মানুষের খুলির আকারের পরিবর্তন সম্ভবত খাদ্য এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ফলে ঘটেছিলো এবং পরিবর্তনটি মুখের দিকের ছিলো। আগে যেমন ধারণা করা হতো জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ফলে মস্তিষ্কের বিবর্তন হয়েছিলো তেমনটি নয়।
২০০,০০০ বছর আগের আধুনিক মানুষের ক্রানিয়াম বা মাথার খুলি আজকের মানুষের থেকে আকারে খুব বেশি আলাদা নয়, তবে এর আকৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা, যা নির্দেশ করে যে সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্ক গোলাকার হয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হাইপোথেসিস বা অনুমান হল: আচরণের পরিবর্তন (যেমন সরঞ্জাম এবং শিল্পের বিকাশ) হোমো সেপিয়েন্সের মস্তিষ্কের আকৃতি পরিবর্তন করেছে এবং এর ফলে মস্তিষ্ক রক্ষাকারী খুলিরও পরিবর্তন হয়েছে।
ক্রেডিট: Simon Neubauer, Jean-Jacques Hublin, Philipp Gunz / MPI EVA Leipzig
কিন্তু এই অনুমান প্রমাণের জন্য জীবাশ্ম প্রমাণ দুষ্প্রাপ্য তাছাড়া এখানে আরো অনেক বিষয় কাজ করে। যেমন একটি বড় মুখের খুলিতে বড় মস্তিষ্ক-র যুক্তি মেনে নিলেন, কিন্তু একটি ছোঠ মুখের খুলিতে বড় মস্তিষ্কের ব্যাপার বিষয়গুলিকে জটিল করে তোলে।
খুলির এমন রূপান্তরের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের Christoph Zollikofer এবং তার সহকর্মীরা ইথিওপিয়া এবং ইস্রায়েলে উদ্ধার হওয়া ৫০টি হোমিনিনের খুলি ডিজিটালভাবে পুনরুদ্ধার করেন যার মধ্যে হোমো সেপিয়েন্সের পাশাপাশি হোমো ইরেক্টাস এবং নিয়ান্ডারথাল নমুনা রয়েছে। এরপর সেই জীবাশ্মের ডিজিটাল ত্রিমাত্রিক মডেলগুলিকে ১২৫টি আধুনিক মানব নমুনার সাথে তুলনা করা হয়।
প্রথমবারের মতো আধুনিক মানব যুগের শুরুর দিকে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে শিশুদের খুলির তুলনা করেন। এর ফলে গবেষকদের মাথার খুলির বিবর্তনে মস্তিষ্কের ভূমিকাকে আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ পান।
গবেষকরা আবাক হয়ে লক্ষ করেন যে ১৬০,০০০ বছর আগে হোমো স্যাপিয়েন্স শিশুদের মাথার খুলির আকার এবং মস্তিষ্কের অনুপাত অনেকটা বর্তমান শিশুদের মতোই ছিলো। কিন্তু আলাদা ছিলো প্রাপ্তবয়স্কদের; তারা বড় হবার সাথে সাথে বেশ লম্বা মুখ তৈরি হয়ে গিয়েছে যা আধুনিক প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা।
মানুষের মুখ ২০ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়তে থাকে, কিন্তু ৫ বছর বয়সে মস্তিষ্ক তার প্রাপ্তবয়স্ক আকারের প্রায় ৯৫ শতাংশে পৌঁছে যায়।
Christoph Zollikofer বলেন,
“যদি প্রাচীন শিশুদের প্রায় সম্পূর্ণ বিকশিত মস্তিষ্কের সাথে বর্তমান শিশুদের মস্তিষ্কের অনুরূপ হয়, কিন্তু প্রাচীন প্রাপ্তবয়স্কদের খুলি বর্তমান প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে খুব ভিন্ন হয় তাহলে আমরা অস্বীকার করতে পারি যে মস্তিষ্কের আকারে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হয়েছে এবং যদি মস্তিষ্ক এই পরিবর্তনটি চালিত না করে তবে আমাদের অবশ্যই অন্য কিছু সন্ধান করতে হবে, যেমন: শ্বাস নেওয়া, খাওয়া বা চলাফেরা ইত্যাদি।”
গবেষকরা বিভিন্ন ব্যাপার বিশ্লেষণ করে সতর্কতার সাথে হাইপোথেসিস দেন যে, খাদ্যের পরিবর্তন বা অক্সিজেনের প্রয়োজন হ্রাস খুলির আকার পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে পারে।
আধুনিক মানুষের মুখ তাদের পূর্বপুরুষদের তুলনায় অনেক ছোট। গবেষণায় দেখায় যে এই পরিবর্তনটি ত্বরান্বিত হয়েছিল যখন শিকারী-সংগ্রাহকরা প্রায় ১২,০০০ বছর আগে কৃষি চাষ শুরু করে শক্ত খাবারের পরিবর্তে নরম খাবার খাওয়া শুরু করেছিলো, সম্ভবত চিবানোর ক্ষেত্রে কম শক্তি ব্যবহারের ফলে আস্তে আস্তে মুখ ছোট হয়ে আসে।
নতুন এই গবেষণার ব্যাপারে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের Chris Stringer বলেন,
“গবেষকরা তাদের দেয়া হাইপোথেসিসের ব্যাপারে সতর্ক থাকার ব্যাপারটা একদম সঠিক সিন্ধান্ত। কারণ চোয়ালের আকার পরিবর্তন যখন হয়েছে অর্থাৎ মধ্য ও শেষ প্রস্তর যুগের মধ্যে, তখনকার প্রধান খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনের সামান্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেকগুলি সম্ভাব্য কারণের মধ্যে, অক্সিজেন গ্রহণে হ্রাসের সম্ভাবনা বেশি হতে পারে কারণ মানুষ পাঁজর ছোট হয়ে গিয়েছে এবং ফুসফুসের ক্ষমতা কমে গিয়েছে। যার ফলে কম অক্সিজেন গ্রহণ করতে হয় তুলনামূলক।”
———
Endocranial ontogeny and evolution in early Homo sapiens: The evidence from Herto, Ethiopia, PNAS (2022), DOI: 10.1073/pnas.2123553119
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।