সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
২০২৪ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পারকে দেওয়া হয়েছে প্রোটিনের গঠন (যা জীবের সকল ক্রিয়াকলাপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ) বোঝার ব্যাপারে যুগান্তকারি আবিষ্কারের জন্য।
প্রতিটি প্রোটিন তৈরি হয় অ্যামিনো অ্যাসিড নামে একটি অণুর স্ট্রিং দিয়ে। এই স্ট্রিংটি ভাঁজ করলেই পাওয়া যায় একটি প্রোটিন। তবে, কীভাবে স্ট্রিংটি ভাঁজ হয় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কখনো কাগজের পাখার মতো ভাঁজ হতে পারে, আবার কখনো সর্পিল আকারে বাঁকতে পারে, অথবা কাগজের টুকরার মতো গুটিয়ে যেতে পারে। এই ভাঁজের ধরন অ্যামিনো অ্যাসিডের ক্রমের উপর নির্ভর করে এবং প্রোটিনের আকৃতির সম্ভাব্য রূপ কেমন হবে তার এক বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
যেমন একটি চাবির আকৃতি নির্ধারণ করে কোন তালা খোলা যাবে, তেমনই প্রোটিনের আকৃতি জীব দেহে তার ভূমিকা নির্ধারণ করে। নোবেল কেমিস্ট্রি কমিটির সদস্য জোহান অকভিস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “প্রোটিন কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে, আপনাকে জানতে হবে এগুলো দেখতে কেমন। আর এ বছরের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তরা সেটাই করেছেন।”
১৯৯৮ সালে, সিয়াটেলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট ডেভিড বেকার এবং তার সহকর্মীরা রোজেটা (Rosetta) নামে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন যা একটি সর্ট অ্যামিনো অ্যাসিডের সিকুয়েন্স নিয়ে এর প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক (৩ডি) গঠন কেমন হবে তা প্রেডিক্ট করতে পারত। তবে ২০০৩ সালে বেকারের দলের প্রকৃত অগ্রগতি আসে যখন তারা এই ধারণাটিকে উল্টে দেয়। তারা প্রকৃতিতে বিদ্যমান নয় এমন একটি কল্পিত ৩ডি প্রোটিন আঁকেন এবং রোজেটাকে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড সিকুয়েন্স বের করতে বলে যা সেই কাঠামোতে ভাঁজ হবে।
রোজেটা সফলভাবে সেটা করতে সক্ষম হয়। বেকারের দল যখন ল্যাবরেটরিতে অ্যামিনো অ্যাসিডের সিকুয়েন্স তৈরি করল, তখন তারা দেখতে পেলো যে রোজেটা-এর প্রেডিক্ট করা অনুসারে প্রোটিনে ভাঁজ হল। সেই সময় থেকে, বেকার অনেক ডিজাইনার প্রোটিন তৈরি করেছেন, যার মধ্যে একটি ফেন্টানিল সনাক্ত করতে পারে এবং অন্যটি করোনাভাইরাসকে বাধা দেয়।
“ডেভিড বেকার প্রোটিনের কাঠামোর একটি সম্পূর্ণ নতুন দুনিয়া উন্মোচন করেছেন, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি। যেখানে কল্পনাই সীমা নির্ধারণ করে দেয় যে আপনি কি করতে পারবেন।”, অকভিস্ট বলেন।
ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পারের পুরস্কারের অংশ এসেছে প্রোটিন কাঠামোর প্রেডিক্ট করার ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য। ২০১৮ সালে, এই দুই কম্পিউটার বিজ্ঞানী, তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দক্ষতা ব্যবহার করে আলফাফোল্ড (AlphaFold) নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমান মডেল তৈরি করেন যা, অ্যামিনো অ্যাসিড সিকুয়েন্স থেকে প্রোটিন কাঠামো প্রেডিক্ট করতে পারে প্রায় ৬০ শতাংশ নির্ভুলতার সাথে। দ্বিতীয় ভার্সন আলফাফোল্ড২ (AlphaFold2), X-ray crystallography পদ্ধতির প্রায় সমান মানের ফলাফল দিতে পারত।
আলফাফোল্ড (AlphaFold) দল এখন পর্যন্ত জানা প্রায় ২০০ মিলিয়ন প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিক্ট করেছ। জীববিজ্ঞানীরা আলফাফোল্ড ব্যবহার করে sea cucumber এবং হানি বি এর জিনোমে থাকা এমন প্রোটিন প্রেডিক্ট করে যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনর বা প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারের মোট পুরস্কার তিনজন বিজয়ীর মধ্যে ভাগ করা হবে। বেকার অর্ধেক পাবেন, এবং হাসাবিস এবং জাম্পার বাকি অর্ধেক ভাগাভাগি করবেন।
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।