সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
প্রথম মানুষ যখন মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাবে, তারা সম্ভবত এমন আবাসস্থলে বাস করবে যা পৃথিবী থেকে নিয়ে যাওয়া পদার্থের দিয়ে অনেক আগেই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ যদি মঙ্গল গ্রহে বড় সংখ্যায় বসতি স্থাপন করতে যায় তাহলে বিভিন্ন ধাতু তৈরিতে মঙ্গলকে স্বাবলম্বী হতে হবে কারণ অবকাঠামো তৈরির জন্য পৃথিবীতে থেকে এত ধাতু সেখানে নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং অসম্ভবও বটে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির একদল গবেষক ধাতু তৈরিতে মঙ্গলকে স্বাবলম্বী হবার উপায় খুঁজছেন। তাদের লক্ষ্য হল, মঙ্গল গ্রহের বসতির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরির সমাধানের জন্য গ্রহে থাকা রিসোর্স ব্যবহার করা। তারা মঙ্গল গ্রহে ব্যবহারের জন্য ধাতু তৈরি করার এমন একটি প্রক্রিয়ার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন, যেটাতে শুধুমাত্র মঙ্গলে যা পাওয়া যায় তা ব্যবহার করে ধাতু তৈরি করতে পারবে। এটি অন্য কোন গ্রহে ধাতু উৎপাদনের উপর করা প্রথম বিশদ গবেষণা।
পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে থাকা সত্তেও মঙ্গল গ্রহে ধাতু, বিশেষ করে লোহা তৈরি করবেন কেন? – উত্তর আসলে অর্থনৈতিক এবং অভিগম্যতার বিষয়।
শুধুমাত্র পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ বলের সীমা থেকে ভালভাবে জিনিসপত্র বের করতে প্রতি কেজি পে-লোডের জন্য কয়েক হাজার ডলার থেকে ৬০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। অবশ্যই, লাল গ্রহে প্রাথমিক মিশনগুলিতে মানুষের বসবাসের জন্য যা যা প্রয়োজন তা সবই থাকবে; তারা সাথে খাদ্য, অক্সিজেন সরবরাহ ইত্যাদি পৃথিবীতে পরিবহন করে নিয়ে যাবে। কিন্তু মঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানের জন্য, মঙ্গলে থাকা রিসোর্স ব্যবহার ছাড়া গতি নেই। এটি সস্তা, দীর্ঘমেয়াদী, এবং টেকসই। তাছাড়া মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতের বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য প্রচুর রিসোর্স রয়েছে।
মঙ্গল যেহেতু মানুষ বসবাসের অযোগ্য তাই সেখান বসবাস করতে হলে অক্সিজেন তৈরি, পানি সংগ্রহ, খাদ্য উৎপাদন এবং জ্বালানী তৈরি করতে হবে আর এজন্য প্রচুর ঘর, ল্যাব এবং সরঞ্জাম প্রয়োজন। কিন্তু সবকিছু পৃথিবী থেকে আনা সবসময় সম্ভব হবে না। সুতরাং, “স্থানীয়” ভাবে তৈরি করতে যাওয়াই সেরা সমাধান।
মঙ্গল গ্রহে সম্পদের ব্যবহার
সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক Akbar Rhamdhani এবং তার দল মঙ্গল গ্রহে ধাতু উৎপাদন করার উপায়গুলি সম্পর্কে গবেষণা শুরু করেছেন এবং সম্প্রতি তাদের ধারণা সম্পর্কে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। মূলত, লাল গ্রহে ধাতব জমার অস্তিত্ব অনুমান না করেই, তারা এমন একটি প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন যা মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে প্রক্রিয়াকৃত বায়ু, পৃষ্ঠের ধুলিকণা এবং ঘনীভূত সূর্যালোক গ্রহণ করে ধাতব লোহা তৈরি করবে। সৌর শক্তি এই কাজের জন্য তাপের উৎস সরবরাহ করবে, শীতল CO গ্যাস কার্বন সরবরাহ করবে। এখন প্রশ্ন হতে পার মঙ্গলে তো কার্বন মনোঅক্সাইড নেই তাহলে পাবে কোথা? -এর উত্তর হলো মঙ্গলে অক্সিজেন উৎপাদনের থেকে। CO নিজেই মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন উৎপাদনের একটি উপজাত। আমরা ইতিমধ্যে জানি যে কৃত্রিম উপায়ে মঙ্গলে অক্সিজেন তৈরি করা যেতে পারে এবং উপজাত হিসেবে CO তৈরি হয়। মার্স পারসিভারেন্স রোভারের Mars Oxygen In-Situ Resource Utilization Experiment (MOXIE) ইতিমধ্যে ১০ মিনিট নিঃশ্বাস নেয়ার মতো অক্সিজেন তৈরি করেছে।
দলের জন্য পরবর্তী ধাপ হল Commonwealth Scientific and Industrial Research Organisation (CSIRO) এর সাথে একটি উদ্যোগ নেয়া। তারা প্রযুক্তিটি আরও বিকাশ করবে, যা মঙ্গল গ্রহের বাইরেও অন্যান্য গ্রহের জন্য খুব কার্যকর হতে পারে।
———
Metals extraction on Mars through carbothermic reduction, Acta Astronautica (2022). DOI: 10.1016/j.actaastro.2022.07.009
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।