সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
বার-নেকড কিলব্যাক (Fowlea schnurrenbergeri) প্রজাতিটি ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ (উভয় বঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গ), উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশ, নেপাল এবং দক্ষিণ পাকিস্তান থেকে উচ্চ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে বিচলন করে।
এটি একটি মাঝারি আকারের সাপ যা ৯০ সেমি পর্যন্ত লম্বা পারে। এর শরীর শক্ত এবং হালকা খোঁচাযুক্ত আঁশ দিয়ে আচ্ছাদিত, পিছনের দিকে বেশ শক্তিশালী এবং পাশের দেহ বেশ মসৃণ। এর শরীরের উপরে বড় কালো দাগ সহ জলপাই-বাদামী বা ধূসর বর্ণ বিদ্যমান। বার-নেকড কিলব্যাক প্রজাতিটি বাহ্যিক রূপের দিক দিয়ে জলঢোঁড়া বা চেকার্ড কিলব্যাক (Fowlea piscator)-এর খুব কাছাকাছি। তবে বার-নেকড কিলব্যাকের ঘাড়ে বড় কালো দাগের কারণে একে জলঢোঁড়া থেকে আলাদা করার যায়।
অ-বিষাক্ত সাপ এ সাপের প্রজাতিটি গণ Fowlea, এশিয়ার স্থানীয় এবং এখন পর্যন্ত মোট আটটি প্রজাতির সমন্বয়ে গঠিত। জলঢোঁড়া সাথে অনেক বেশি সাদৃশ্যের কারণে বার-নেকড কিলব্যাক সাপটিকেকে দীর্ঘকাল ধরে কোনো শ্রেণীবিন্যাসের অন্তর্ভূক্ত করতে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। ১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো বৈজ্ঞানিকভাবে ইউজেন ক্র্যামার (Eugen Krame) নেপাল থেকে নমুনা পরীক্ষা করেন এবং Fowlea schnurrenbergeri-কে সঠিক শ্রেণীবিন্যাস অবস্থান প্রদান করেন। F. schnurrenbergeri-কে পূর্বে ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান থেকে রেকর্ড করা হলেও যথাযথ বৈজ্ঞানিক দলিল সহ বাংলাদেশে এই প্রজাতির কোনো পূর্ববর্তী রেকর্ড ছিল না।
নতুন গবেষণায়, গবেষকরা প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের ২টি স্থানে F. schnurrenbergeri খুঁজে পান যায়। নমুনা সংগ্রহলের পর তার ডিজিটাল ছবি কাজী জাকের হোসেন প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জমা দেওয়া হয়। এই গবেষণাটি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতিখার মাহামুদে নেতৃত্বে ডিপ ইকোলজি এন্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের আদনান আজাদ আসিফ, আশিকুর রাহমান সোম এবং মো: মাহফুজুর রহমান সম্পন্ন করেন। সাপটির বাংলা নাম এখন পর্যন্ত প্রদান করা হয় নি।
দ্বিতীয় সাপটি ধরা পড়েছিল একটি মাছ ধরার জালে। মোঃ ফারহান উদ্দিন নামের স্থানীয় একজন উদ্ধারকারী সাপটিকে উদ্ধার করে উন্মুক্ত করে দেয়।
গবেষকরা বলে,
“আমরা F. schnurrenbergeri-এর সক্রিয় খাওয়াদাওয়া পর্যবেক্ষণ করেছি যা এই পর্যবেক্ষণটি পরিচালনা করে। Eugen Krame (১৯৭৭) দ্বারা প্রদত্ত ট্যাক্সোনমিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সাপের দুটি নমুনা সনাক্ত করি। এই নমুনাগুলি বাংলাদেশে F. schnurenbergeri (Kramer, 1977) এর প্রথম রেকর্ডের প্রতিনিধিত্ব করে।”
গবেষকরা আরো জানান
“আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা জানাই মোঃ ফজলে রাব্বি, প্রভাষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, আমাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রজ্জ্বল রায় এবং চন্দ্রিমা বোস, এবং যারা আমাদের তথ্য সংগ্রহ করতে সাহায্য করেন তাদের সকলের প্রতি। তারিক আজিজ বাপ্পি এবং এসকে মো: ফারহান উদ্দিন জুবায়েরকে ফটোগ্রাফিতে তাদের অবদানের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগকে ধন্যবাদ আমাদেরকে তাদের সংগ্রহ পর্যালোচনা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য।”
এর আগে বাংলাদেশে Fowlea গণের দুটি প্রজাতি (F. flavipunctatus এবং F. piscator) সাপ আবিষ্কৃত হয়েছিল।
নতুন এই সাপটির মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমানে ১০৩টিরও সাপের অস্তিত্ব পাওয়া গেলো। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এর সর্বশেষ তালিকা অনুসারে বাংলাদেশে ১০০ টি সাপ রয়েছে। তবে এই তালিকা ২০১৫ সালের। এরপর এই নতুন আবিষ্কার সাপ সহ আরো বেশ কয়টি সাপের প্রজাতি পাওয়া গেছে যার ফলে বাংলাদেশে এখন ১০৩+ প্রজাতির সাপ রয়েছে। যার মধ্যে ১৬ প্রজাতির সাপ সামুদ্রিক।
———
New Record of Bar-Necked Keelback, Fowlea schnurrenbergeri (Kramer, 1977) (Squamata: Colubridae) in Bangladesh. Bangladesh Journal of Zoology (2022), 50(2), 273–276. DOI: 10.3329/bjz.v50i2.62059
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।