সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
একটি মার্কিন বায়োটেক কোম্পানি এমন ইঁদুর তৈরি করেছে, যাদের শরীরে বিলুপ্ত উলি ম্যামথের কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে। কোলসাল ল্যাবরেটরিজ অ্যান্ড বায়োসায়েন্সেস (Colossal Laboratories and Biosciences)-এর গবেষকরা তাদের ইঁদুরের দেহে ম্যামথের মতো ঘন, অগোছালো লোম এবং বরফের মধ্যে টিকে থাকার জন্য কার্যকরী ফ্যাট বার্ণ করার বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছেন।
কোলসালের চূড়ান্ত লক্ষণ হল এই উলি ম্যামথের বৈশিষ্ট্যসহ আরও কিছু গুণাবলী আধুনিক হাতিদের মধ্যে প্রবেশ করানো। বিজ্ঞান জগতের এই বিলুপ্ত প্রাণি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারকে ডি-এক্সটিংশন (de-extinction) নামে পরিচিত।
ক্রেডিট: Colossal Biosciences/AP
তবে, হাতিদের গর্ভধারণের সময় অনেক দীর্ঘ হওয়ার সাথে সাথে এদের সামাজিক আচরণও জটিল, যার ফলে এদের ওপর সরাসরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা নৈতিক ও প্রাণীর কল্যাণের দিক থেকে বড় সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই, প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য গবেষকরা ইঁদুর নির্বাচন করেছেন।
ইঁদুর দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং এদের জিন পরিবর্তন করাও তুলনামূলক সহজ, ফলে বিজ্ঞানীরা এই ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে নিজেদের পদ্ধতি উন্নত করতে পারেন।
একটি মৃত ম্যামথকে ক্লোন করার পরিবর্তে, কোলসাল আধুনিক হাতিকে ম্যামথে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে। পুরো প্রক্রিয়ার সূচনা হয় প্রাচীন ডিএনএ থেকে। কোলসালের দল প্রথমে আর্কটিকের পার্মাফ্রস্টে সংরক্ষিত উলি ম্যামথের অবশিষ্টাংশ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেন। তারপর তারা এই প্রাচীন ডিএনএ এবং আধুনিক হাতির ডিএনএ তুলনা করে সেই জিনগুলো চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো ম্যামথে উল-ময় লোম ও দ্রুত ফ্যাট বিপাকের জন্য দায়ী।
ক্রেডিট: Colossal Biosciences
পরবর্তী ধাপে ব্যবহৃত হয়েছে ক্রিসপার (CRISPR) নামে এক শক্তিশালী জিন এডিটিং প্রযুক্তি। এই টুল ব্যবহার করার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো জীবের ডিএনএ-তে পরিবর্তন আনতে পারেন। ক্রিসপার ব্যবহার করে গবেষকরা ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরের ভ্রূণের ডিএনএ তে লোমের গঠন ও ফ্যাট বিপাক নিয়ন্ত্রণকারী ম্যামথের জিন যুক্ত করেন।
যদি সরাসরি হাতিদের উপর এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করা হত, তা অনেক বেশি জটিল ও নৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হত। ইঁদুরে সফলতা পাওয়ায় এই ধারণাটি বাস্তবায়নের প্রাথমিক প্রমাণ স্বরূপ কাজ করছে। হাতির ক্ষেত্রে, প্রক্রিয়াটিতে প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রূণ এডিটিং ও সেগুলোকে মাতৃদেহে প্রতিস্থাপন করার কাজ করতে হবে।
ক্রেডিট: Kiyoshi Ota/Epa Images
যদিও উলি ম্যামথের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হাতি তৈরির ধারণাটি এখনও অনেক দূরে তবে ইঁদুর নিয়ে এই প্রাথমিক কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সহজ ও পরিচিত একটি প্রাণীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও নিজেদের কৌশল পরিমার্জন করতে পারছেন, যা বৃহৎ ও জটিল প্রাণীর ক্ষেত্রে পরীক্ষা করার সময় উদ্ভূত জটিলতা এড়াতে সহায়ক হবে।
তাদের গবেষণা ভবিষ্যতে থাইলাসিন (তাসমানিয়ার দ্বীপে বাস করত এমন এক মাংসাশী প্রাণী) বা ডোডো (একসময় মরিশাসে বিচরণ করত) এর মতো অন্যান্য প্রজাতিকে পুনর্জীবিত করার পথও প্রশস্ত করতে পারে। এমনকি, বর্তমান বিপন্ন প্রজাতির বাঁচার সম্ভাবনাও বাড়াতে পারে, যেমন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য উপযুক্ত জিন সংযুক্ত করণ।
বাসস্থান সংকুচিত হচ্ছে এব্য প্রজাতিগুলো ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে, তাই উদ্ভাবনী সংরক্ষণ কৌশল জরুরি। এই পরীক্ষায় প্রদর্শিত জিন এডিটিং প্রযুক্তি প্রচলিত সংরক্ষণ পদ্ধতির পাশাপাশি একটি কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে।
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।