সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, পঙ্গপাল তাদের গন্ধের অনুভূতি ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষ থেকে সুস্থ কোষ আলাদা করতে পারদর্শী। এই নতুন আবিষ্কারটি আমাদেরকে আক্রান্ত হবার প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। যখন ক্যান্সার তার প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়ে, রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৮০% থেকে ৯০% থাকে। কিন্তু চতুর্থ পর্যায়ও যদি ধরা না পড়ে তাহলে সেই সংখ্যা ১০% থেকে ২০%-এ নেমে আসে।
গবেষকরা বলছেন যে, এই গবেষণাটি এমন ডিভাইস জন্য ভিত্তি প্রদান করতে পারে যার মাধ্যমে শুধুমাত্র রোগীর শ্বাস ব্যবহার করে ক্যান্সারের প্রাথমিক সনাক্তকরণে সক্ষম হবে। পঙ্গপাল আসলে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার কোষ আলাদাভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম তাই গবেষকরা আশাবাদী পোকার এই ক্ষমতাকে যদি কোনো চিকিৎসা যন্ত্রে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে ক্যান্সারের প্রাথমিক সনাক্তকরণে প্রচুর পরিমাণে সম্ভাবনা রয়েছে।
পঙ্গপাল যেহেতু বিজ্ঞানীরা নিয়মিত গন্ধ গবেষণায় ব্যবহার করেন তাই ইতিমধ্যেই এই প্রাণী এবং এদেন ঘ্রাণশক্তি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা। পঙ্গপালের মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করে, গবেষক দলটি বিভিন্ন কোষ থেকে নির্গত গ্যাসের নমুনার বিপরীতে পোকামাকড়ের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করতে সক্ষম হয়।
যদিও গ্রাণশক্তি ব্যবহার করে কাজ করতে পারে; এই জাতীয় যন্ত্র এখন আমাদের কাছে নেই, তবে গবেষকদের মতে যন্ত্রটি বানানো যতটা অসম্ভব শোনাচ্ছে ততটাও নয় কারণ তারা এক নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করকেন বলে জানান। গবেষণা পত্রটি গত ২৫শে মে, পিয়ার-রিভিউড হবার আগে প্রি-প্রিন্ট প্রকাশের ওয়েবসাইট BioRxiv (BioRxiv এর উচ্চারিত “বায়ো আর্কাইভ”)-এ প্রকাশিত হয়।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক দেবজিৎ সাহা বলেন,
“নাক এখনও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বললে ভুল হবে না। গ্যাস সেন্সিং এর ক্ষেত্রে নাকের মতো বা বিকল্প কিছুই নেই। এই কারণেই আমরা কুকুর এবং তাদের অসাধরণ গন্ধশক্তি বিশ্বাস করি ড্রাগ, বিস্ফোরক শনাক্তকরণ। অতি সম্প্রতি, low blood sugar, এমনকি COVID-19 সহ স্বাস্থ্যের অবস্থা শনাক্ত করতে কুকরের ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।”
ক্রেডিট: Derrick L. Turner
বিজ্ঞানীরা এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন যা গন্ধের অনুভূতিকে অনুকরণ করতে পারে, কিন্তু তারা যা তৈরি করেছে তা এখনও পুরানো দিনের জৈবিক ঘ্রাণের গতি, সংবেদনশীলতা এবং নির্দিষ্টতার সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে না।
ক্যান্সার কোষ সুস্থ কোষের চেয়ে ভিন্নভাবে কাজ করে এবং তারা যখন কাজ করে ও বৃদ্ধি ঘটায় তখন বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ তৈরি এর নির্গত করে। যদি এই রাসায়নিকগুলি রোগীর ফুসফুসে বা শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে (যেটা সাধারণত হয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়ে), তবে শ্বাস-প্রশ্বাসে যৌগগুলি সনাক্ত করে ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব।
যেহেতু গন্ধের অনুভূতিকে অনুকরণ করার মতো কোনো যন্ত্র নেই তাই সাহা এবং তার দল নতুন পদ্ধতি তৈরি করছে। জীববিজ্ঞানের নিয়ম মেনে তান মতো কাজ করে এমন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করার পরিবর্তে দলটি মূলত রোগ নির্ণয়ের জন্য কীটপতঙ্গের মস্তিষ্ককে “হ্যাকিং” করার চিন্তা করছে।
———
Harnessing insect olfactory neural circuits for noninvasive detection of human cancer. Submitted to bioRxiv, 2022 [abstract]
প্রতিদিন আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।