সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
মহাসাগরের জাদুকরী সব সামুদ্রিক প্রাণে পূর্ণ যা জীববৈচিত্র্যে অসাধারণ সব অদ্ভুত বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে যার মধ্যে নিহিত রয়েছে অসংখ্য রহস্য। সমুদ্রের সবচেয়ে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় রহস্যগুলির মধ্যে একটি হলো গভীর সমুদ্রের প্রবালের অন্ধকারে জ্বলজ্বল করা।
একটি নতুন গবেষণায় তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি দল বের করেছে, কেন গভীর সমুদ্রের প্রবাল অন্ধকারে জ্বলে। প্রবাল যেহেতু প্রাণী, উদ্ভিদ নয় কারণ তারা তাদের নিজস্ব খাদ্য তৈরি করে না তাই তাদেরকে খাদ্য সংগ্রহ করতে হয়। গবেষকদের মতে, গভীর সমুদ্রের প্রাবাল উজ্জ্বল সবুজ এবং হলুদ রঙের ফ্লোরেস শিকারকে প্রলুব্ধ করতে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে।
তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাল প্রাচীর গবেষক Or Ben-Zvi বলেন,
“প্ল্যাঙ্কটন দ্বারা ফ্লুরোসেন্স সংকেতের চাক্ষুষ উপলব্ধি সম্পর্কিত বিদ্যমান জ্ঞানের ফাঁক থাকা সত্ত্বেও, বর্তমান গবেষণায় প্রবালের শিকার আকৃষ্ট করার কাজে ফ্লুরোসেন্সের ভূমিকার পরীক্ষামূলক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।”
বেশিরভাগ প্রবালপ্রাচীর তৈরিকৃত প্রবাল অগভীর পানিতে ঝাঁকে-ঝাঁকে থাকে তাই তাদের সিম্বিয়াসিস হিসেবে বসবাসকৃত শৈবালগুলি সমুদ্রের পৃষ্ঠ সূর্যের আলো ক্যাপচার করতে পারে এব খাদ্য তৈরি করতে পারে প্রবালের জন্য। এসব শৈবালই হল বিজ্ঞানীদের পরিচিত এবং প্রিয় সালোকসংশ্লেষিত zooxanthellae যারা প্রবালের সাথে ভাগাভাগি করে জীবনযাপন করে।
কিন্তু অন্যান্য প্রবাল প্রজাতি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬,০০০ মিটার বা তারও বেশি গভীরতায় বৃদ্ধি পেতে পারে যেখানে সূর্যালোক পৌঁছায় না এবং সালোকসংশ্লেষণ যেখানে অসম্ভব।
নতুন এই গবেষণার গবেষকরা মনে করেছেন যে, এই গভীর পানির প্রবাল, যার মধ্যে অনেকগুলি ফ্লুরোসেন্ট। তারা এই আলো ব্যবহার করতে পারে তাদের শিকারকে আকর্ষণ করার জন্য। কিন্তু শুধু মনে করলেই তো হবে না, সেটাকে প্রমাণ করতে উপযুক্ত প্রমাণ যোগার করতে হবে।
এজন্য গবেষকরা এমন প্রবাল প্রজাতির যোগার করেন যারা হালকা-হ্রাসমান গভীরতায় বেড়ে ওঠে এবং খাবারের জন্য সালোকসংশ্লেষণ (zooxanthellae-র সিম্বিয়াসিস হিসিবে বাস করার জন্য)-এর চেয়ে শিকারের উপর বেশি নির্ভর করে।
বেশ কয়েকটি ল্যাব পরীক্ষা-নিরীক্ষার, দলটি পরীক্ষা করেছে যে Artemia salina নামে এক ক্ষুদ্র চিংড়ি ট্যাঙ্কের বিপরীত দিকে অবস্থিত পরিষ্কার, প্রতিফলিত বা ম্যাট-রঙের লক্ষ্যগুলির চেয়ে সবুজ বা কমলা ফ্লুরোসেন্ট লক্ষ্য পছন্দ করে কিনা।
দেখা গেলো, Artemia salina ফ্লুরোসেন্ট সংকেতের দিকে আকৃষ্ট হয়ে এবং সেদিকে সাঁতার কাটছে।
ক্রেডিট: Tel Aviv University
অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে যখন গবেষকরা লোহিত সাগরের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত ইলাত উপসাগরে পরীক্ষাগুলি স্থাপন করেন। সেখানে দেখা গেছে Anisomysis Marisrubri প্রতিফলিত লক্ষ্যবস্তুর চেয়ে ফ্লুরোসেন্ট সংকেত পছন্দ করে এবং সেদিকে এগিয়ে যায়। (তবে গবেষণকরা আরো লক্ষ্য করেন একটি প্রবর্তিত প্রজাতির মাছের লার্ভা তা করেনি)
শেষ পর্যন্ত, গবেষকরা ইলাত উপসাগরে ৪৫ মিটার গভীরতা থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন রঙের Euphyllia paradivisa প্রবালের শিকারের হার তুলনা করেন এবং সেগুলিকে ল্যাবে নিয়ে যান।
দেখা গেছে যে, যেসব প্রবালগুলি ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রঙের তারা তাদের হলুদ-ফ্লুরোসিং সঙ্গীর চেয়ে বেশি শিকারকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে, ৩০ মিনিটের মধ্যে। এবং যখন পরীক্ষাটি লাল আলোর অধীনে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল, নীল আলোর পরিবর্তনে (নীল আলো ফ্লুরোসেন্সকে বাড়িয়ে তোলে কিন্তু লাল আলো করে না), তখনও পরিক্ষার ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসে নি।
ক্রেডিট: Tel Aviv University
অবশ্যই, এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই গবেষণাটি শুধুমাত্র একটি প্রজাতির মেসোফোটিক প্রবালের ওপর করা হয়েছে। অন্যান্য প্রবালের কীভাবে রঙ উপলব্ধি করে তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
কিন্তু নির্বিশেষে, গবেষণার ফলাফল আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কেন প্রবাল (যা জীববৈচিত্র্যময় সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি) রক্ষা করাটা এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
———
Coral fluorescence: a prey-lure in deep habitats. Communications Biology 5, 537 (2022). DOI: 10.1038/s42003-022-03460-3
প্রতিদিন আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।