সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। তারপরও আমরা যা জানি তা বিভিন্ন গ্যালাক্সির আলো পর্যবেক্ষণ উপর ভিত্তি করে হিসাব-নিকাশ থেকে আসে। সমস্যা হচ্ছে এসব গ্যালাক্সি অনেক দুরের বস্তু এবং এতদিন আগে ঘটে যাওয়া কিছু দেখা বেশ কঠিন। আলোর সীমিত গতির কারণে, আমরা দূরবর্তী ছায়াপথগুলিকে আজকের মতো নয়, বরং কোটি-কোটি বছর আগে দেখতে পাই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার পর্যবেক্ষণ করা, যা আবার আলো নির্গত কিংবা শোষণ করে না।
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দ্বারা প্রেডিক্ট করার মতোই ফোরগ্রাউন্ড গ্যালাক্সির মহাকর্ষীয় টান এবং এর ডার্ক ম্যাটার আশেপাশের স্থান এবং সময়কে বিকৃত করে। উৎস গ্যালাক্সি থেকে আলো বিকৃতির মধ্য দিয়ে যাবার সময় বেঁকে যায় যা গ্যালাক্সির আপাত আকার পরিবর্তন করে দেয়। ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ যত বেশি, বিকৃতি তত বেশি। এইভাবে, বিজ্ঞানীরা বিকৃতি থেকে ফোরগ্রাউন্ড গ্যালাক্সি (যেটিকে ‘লেন্স গ্যালাক্সি’ বলা হয়) এর চারপাশে ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ পরিমাপ করতে পারে। সহজ ভাবে বলতে গেলে ডার্ক ম্যাটার নিজে আলো নির্গত করে না এবং এটি অন্ধকার মেঘের মতো আলো শোষণও করে না। কিন্তু এটি মহাকর্ষীয়ভাবে আলোকে প্রভাবিত করে। ডার্ক ম্যাটার আলোর গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং তৈরি করে যা আলোকে বিচ্যুত করে দেয়। এই আলোর লেন্সিং থেকে বিজ্ঞানীরা সেই অঞ্চলের ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারে।
কিন্তু, একটি নির্দিষ্ট সীমার পর বিজ্ঞানীরা সমস্যার সম্মুখীন হয়। আমাদের নাগালে থাকা মহাবিশ্বের দূরবর্তী ছায়াপথগুলি অবিশ্বাস্যভাবে ঘোলাটে। সেখানকার আলোর লেন্সিং সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ফলস্বরূপ, আমরা পৃথিবী থেকে যত বেশি দূরে পর্যবেক্ষণ করতে যাওয়া যায় এই কৌশলটি তত কম কার্যকর হয়। তখন লেন্সিং-এর ফলে বিকৃতিকে সূক্ষ্ম এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সনাক্ত করা কঠিন।
বেশিরভাগ পূর্ববর্তী গবেষণা একই সীমাতে আটকে আছে। আলোর বিকৃতি পরিমাপ করার জন্য যথেষ্ট দূরবর্তী উৎস গ্যালাক্সি সনাক্ত করতে অক্ষম হওয়ায় সেসব গবেষণায় বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র ৮০০ থেকে ১,০০০ কোটি বছর আগের ডার্ক ম্যাটার বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই সীমাবদ্ধতার কারণ আমরা পুরোনো অর্থাৎ শুরুর দিকের ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে জানতে পারি না।
কিন্তু এই সাম্প্রতিক গবেষণায়, গ্যালাক্সিগুলি এতটাই দূরে যে সত্যিই এর চেয়ে দূরবর্তী আর কোনো তেমন গ্যালাক্সি নেই। নিশ্চিতভাবে কোনটিই যথেষ্ট উজ্জ্বল নয় যে, আমরা তাদের আলোর লেন্সিং দেখতে পারি। তাই জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী পর্যবেক্ষণে আলোর পরিবর্তে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (CMB)-র রেডিয়েশন ব্যবহার করেছে। ডার্ক ম্যাটার চিহ্ন খুঁজতে, দলটি Subaru Hyper Suprime-Cam Survey (HSC) থেকে ডেটা ব্যবহার করে প্রায় ১৫ লক্ষ অস্পষ্ট এবং দূরবর্তী গ্যালাক্সি শনাক্ত করে। এটি থেকে, তারা আদি মহাবিশ্বে ডার্ক ম্যাটারের একটি মানচিত্র তৈরি করে।
এটি এখন পর্যন্ত তৈরি করা ডার্ক ম্যাটারের সবচেয়ে দূরবর্তী ম্যাপ। স্ট্যান্ডার্ড কসমোলজিক্যাল মডেলে, যা LCDM মডেল নামে পরিচিত, ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে চালিত করে, গ্যালাক্সি গুলোকে একে অপরের দিকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে, যখন পদার্থ এবং ডার্ক ম্যাটারের মহাকর্ষীয় আকর্ষণ গ্যালাক্সিগুলিকে একত্রিত করার চেষ্টা করে। LCDM-এর মতে, কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ডে আমরা যে স্কেলে ওঠানামা লক্ষ্য করি তা সেই স্কেলে চালিত করে গ্যালাক্সিগুলি একত্রিত করে, যা আমাদের বলে যে প্রথম মহাবিশ্বে কতটা ঘন গ্যালাক্সির ক্লাস্টার থাকা উচিৎ।তবে নতুন এই গবেষণা মতে, প্রারম্ভিক সময়ের মধ্যে গ্যালাকটিক ক্লাস্টারিংয়ের পরিমাণ LCDM মডেলের পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য কম।
দলের পরিমাপের ফলাফল চূড়ান্ত নয়। এটা সম্ভব যে তারা কেবল ক্লাম্পিং স্কেলের নীচে পরিমাপ করেছে। কিন্তু যদি এটি সঠিক হয়, তাহলে এটি প্রস্তাব করে যে মহাবিশ্বের নিয়ম ১,২০০ বছর আগে একটু ভিন্ন ছিল।
সম্ভাবনার অনেক আছে। কিন্তু এই কাজের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল আমাদের কাছে এখন প্রকৃত তথ্য আছে। এটি একটি বড় প্রথম পদক্ষেপ, এবং যেহেতু আমরা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এবং ভেরা রুবিন অবজারভেটরির মতো টেলিস্কোপ থেকে আরও ডেটা পেয়েছি, তাই আমাদের এই রহস্যের সমাধান করতে সক্ষম হওয়া উচিত, এবং সমাধাণ করলে অবশেষে জানতে পারবো যে মহাজাগতিক নিয়মগুলি সত্যিই অন্ধকারে এবং প্রাথমিক সময়ে আলাদা ছিল কিনা।
———
First Identification of a CMB Lensing Signal Produced by 1.5 Million Galaxies at z∼4: Constraints on Matter Density Fluctuations at High Redshift. Physical Review Letters, 2022; 129 (6) DOI: 10.1103/PhysRevLett.129.061301
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।
শিরোনামের নিচে সারসংক্ষেপ পড়ে আমি একটু ভড়কে গেসিলাম — ডার্ক ম্যাটার পর্যবেক্ষণ? পুরোটা পড়ে বুঝলাম তা না।
একটা ব্যাপার, “ডার্ক ম্যাটার আশেপাশের স্থান এবং সময়কে বিকৃত করে” – বিকৃতি বলতে স্থান-কালের বাঁকা হওয়াকেই বুঝিয়েছেন, তাই না?
বাক্যগুলো আরো প্রাঞ্জল করলে ভালো হতো, পড়লে মনে হয় বিদেশী প্রবন্ধের বাক্যে বাকে অনুবাদ।
আমি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়ি নাই, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান আমরা ভালো লাগে। প্রবন্ধের জন্য ধন্যবাদ।
বিকৃত বলা হয়েছে কারণ একাধিক বস্তু থাকে যা সবসময় “বাঁকা” বললে ভুল হবে। কারণ ভর স্থান-কালকে প্রসারিত করে বাঁকায়।
বাকিটার উত্তর লেখক দিবে। ওর পরিক্ষা চলছে…