সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
গবেষকরা বরফের সম্পূর্ণ এক নতুন রূপ খুঁজে পেয়েছেন। বরফটি amorphous বা নিরাকার, যার অর্থ সাধারণ বরফের মতো এর কোনো সুগঠিত স্ফটিক কাঠামো নেই।
সাধারণত যখন পানি জমে যায়, তখন এটি স্ফটিক হয়ে যায় এবং এর অণুগুলি ষড়ভুজাকার কঠিন কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়ে বরফ তৈরি করে। বরফ তার তরল আকারের তুলনায় কম ঘন অর্থাৎ ঘনত্ব কম। কিন্তু ‘নিরাকার বরফ’ আলাদা।
আমরা ইতিমধ্যে দুই ধরনের নিরাকার/আকার বিহীন বরফ সম্পর্কে জানি: উচ্চ-ঘনত্বের এবং নিম্ন-ঘনত্বের। মাঝখানে একটি ফাঁক ছিল, এবং গবেষকরা ভেবেছিলেন মাঝারি-ঘনত্বের নিরাকার বরফ বা MDA (medium-density amorphous) তৈরি করার কোন উপায় নেই। কিন্তু যখন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের Christoph Salzmann এবং তার সহকর্মীরা সাধারণ বরফ (যার একটি ষড়ভুজাকার স্ফটিক কাঠামো রয়েছে) এবং স্টিলের বল বিয়ারিং হিমাঙ্কের নিচে ২০০ (-২০০° সে.) ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করা একটি টাম্বলারে রাখেন, তখন ঝাঁকুনি দ্বারা উৎপাদিত লব্ধি বল (shear force) মাঝারি-ঘনত্বের নিরাকার বরফ বা MDA তৈরি করেছিলো। বরফটি একটি সাদা দানাদার পাউডার হিসাবে তৈরি হয়েছিল যা ধাতব বলের সাথে আটকে ছিলো।
গবেষকরা এক্স-রে ডিফ্র্যাকশনের মাধ্যমে সেই সাদা দানাদার পাউডারের গঠন পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখতে পান যে, এর আণুবিক ঘনত্ব তরল পানির মতো এবং এর গঠনের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই অর্থাৎ কোনো স্ফটিক তৈরি হয় নি।
গবেষকরা তাদের তৈরি ফলাফলকে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দ্বারা তৈনি মডেলের সাথে মিলেছে। মডেলেটি এই পদ্ধতিতে সাধারণ বরফ ভেঙে গেলে কী হবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করে।
যদিও কোনো নিরাকার বরফ পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয় না। তবে মহাকাশে এদের উপস্থিত অনেক। যেমন ধূমকেতু আসলে কম-ঘনত্বের নিরাকার বরফের এক বড় টুকরো।
আমাদের সৌরজগতের কিছু উপগ্রহে, যেমন বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা এবং শনির চাঁদ এনসেলাডাস, বরফযুক্ত পৃষ্ঠ রয়েছে। যদি এই ধরনের চাঁদের দুটি বরফযুক্ত অঞ্চল জোয়ারের কারণে একসাথে ঘষা খায়, তবে তারা গবেষকরা ব্যবহার করা একই শিয়ারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে মাঝারি-ঘনত্বের নিরাকার বরফ তৈরি করতে পারে।
যেহেতু সাধারণ বরফ থেকে ‘মাঝারি-ঘনত্বের নিরাকার’ বরফের ঘনত্ব বেশি ফলে এই ঘনত্বের বৃদ্ধি ভূপৃষ্ঠে ফাঁক তৈরি করতে পারে। বরফ একসাথে ফাটলে চাঁদে বাধা সৃষ্টি হতে পারে ফলে বরফের ব্যাপক ধস হতে পারে। যা বরফের চাঁদের ভূ-পদার্থবিদ্যার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে, এই চাঁদে বরফের পৃষ্ঠের নীচে থাকা তরল-পানির মহাসাগরের সম্ভাব্য বাসযোগ্যতার জন্য প্রভাব থাকতে পারে।
গবেষণার ফলাফলটি আজকে বিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল Science-এ প্রকাশিত হয়।
———
Medium-density amorphous ice. Science (2023) 379 (6631): 474-478;
DOI: 10.1126/science.abq2105
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।