সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) আজ অবিশ্বাস্য অগ্রগতি অর্জন করেছে— ভার্চুয়াল অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে বিশ্ববিখ্যাত জাদুঘর ভ্রমণ, সবই সম্ভব ঘরে বসেই। তবে, খাওয়ার স্বাদ এখনও ভার্চুয়াল জগতে অনুকরণ করা সম্ভব হয়নি। সে দিনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে।
দ্য ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের তৈরি নতুন ডিভাইস ই-টেস্ট (e-Taste) এই সীমা ভাঙতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ডিভাইসটি একটি বায়ো-ইন্টিগ্রেটেড গাস্টেটরি ইন্টারফেস (bio-integrated gustatory interface) এর মাধ্যমে কাজ করে যা রাসায়নিক প্রযুক্তির মাধ্যমে খাবারের স্বাদ তৈরি করতে পারে। এই উদ্ভাবনের রিসার্চ পেপার Science Advances জার্নালে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ এ প্রকাশিত হয়েছে।
ক্রেডিট: The Ohio State University
কীভাবে ডিভাইসটি কাজ করে?
প্রথমে ডিভাইসটি খাদ্যের অণু স্ক্যান করে গ্লুকোজ বা গ্লুটামেটের মতো মূল উপাদান শনাক্ত করে। এরপর সেটিকে মিষ্টি, টক, নোনতা, তিতা বা উমামি—এই পাঁচটি মৌলিক স্বাদের কোনো একটিতে শ্রেণিবদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ায় এক গবেষক লেবুর সরবতে সেন্সর ডুবিয়েছিলেন, এবং সেই ডেটা ওহাইওতে থাকা সহকর্মীর ডিভাইসে পাঠানো হয়েছিল।
এরপর ডিভাইসের ভেতর একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পাম্পে বিভিন্ন তরল রাসায়নিক থাকে, যা মৌলিক স্বাদের জন্য দায়ী। স্ক্যান করা খাবারের অণু অনুযায়ী সঠিক অনুপাতে এই রাসায়নিকগুলো মিশিয়ে জেল তৈরি করা হয় এবং সেটার স্বাদ নিয়ে ব্যবহারকারী স্বাদের অনুভূতি পেতে পারে।
প্রাথমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা টক স্বাদের তীব্রতা ৭০% সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তবে কেক, ভাজা ডিম, কফি বা মাছের স্যুপের মতো জটিল স্বাদ চেনার ক্ষেত্রে ফলাফল কম সঠিক ছিল। গবেষকদের মতে, গন্ধ, স্মৃতি বা দেখতে কেমন, তা উপাদান স্বাদ গ্রহণের ওপর প্রভাব ফেলে, তাই এই অসামঞ্জস্য আশ্চর্যজনক নয়।
ক্রেডিট: The Ohio State University
ই-টেস্টের আগে হংকংয়ের গবেষকরা একটি ললিপপের মতো ডিভাইস বানিয়েছিলেন, যা ৯টি স্বাদ তৈরি করতে পারে। ১৯৩০-এর দশক থেকে থিয়েটারে মুভির সাথে গন্ধ ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে (“Smell-O-Vision“)। জাপানি বিজ্ঞানীরা “গন্ধ স্ক্রিন” বানিয়েছিলেন, আর সনি প্লেস্টেশন গেমিংয়ে পরিবেশের গন্ধ যোগ করার পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছে।
বিনোদনের বাইরেও এই প্রযুক্তির প্রয়োগ রয়েছে যেমন: খাবার কিনতে গিয়ে ভার্চুয়ালি টেস্ট করা, কোনো রোগীর স্বাদক্ষমতা পরীক্ষা, মেটাভার্সে সম্পূর্ণ ইমারসিভ অভিজ্ঞতা তৈরি করা ইত্যাদি।
ই-টেস্ট এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও, গবেষকরা বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল জগতে খাবারের স্বাদ উপভোগ করা কল্পনা নয়—বাস্তবতা হয়ে উঠবে! ভার্চুয়াল স্বাদ প্রযুক্তির এই অগ্রগতি মানব অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
–––
A sensor-actuator–coupled gustatory interface chemically connecting virtual and real environments for remote tasting. Sci. Adv. 11, eadr4797 (2025).
DOI:10.1126/sciadv.adr4797
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।