সর্বশেষ বিজ্ঞান সংবাদ বিজ্ঞানবার্তা-র গুগল নিউজ চ্যানেলে।
২০২৪ সালের চিকিৎসাবিদ্যা বা শরীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন ভিক্টর অ্যামব্রোস এবং গ্যারি রাভকুন। তারা মাইক্রোআরএনএ (microRNA) নামের এক ধরণের ক্ষুদ্র আরএনএ অণু আবিষ্কার করার জন্য এবছরের নোবেল জিতে নেন যা প্রাণী এবং উদ্ভিদের জিন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই মাইক্রোআরএনএ (microRNA) বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ একটি মাইক্রোআরএনএ একাধিক জিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আবার একটি জিনও একাধিক মাইক্রোআরএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
নোবেল কমিটির ভাইস-চেয়ার ওলে ক্যাম্পে (Olle Kämpe) জানান যে, এই আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ঘাটন করবে যা ভ্রূণ বিকাশ, স্বাভাবিক শারীরবৃত্তি এবং ক্যান্সারের মতো রোগ সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যামব্রোস এবং রাভকুন তাদের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি করেছেন Caenorhabditis elegans নামের একটি বিশেষ ধরনের কৃমি নিয়ে গবেষণা করার সময়। তারা ১৯৮০-এর দশকে একই ল্যাবে এই গবেষণা শুরু করেন এবং পরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে তাদের কাজ চালিয়ে যান।
ক্রেডিট: Niklas Elmehed/Nobel Prize Outreach
কোষের নিউক্লিয়াসের ডিএনএতে প্রোটিন তৈরির নির্দেশাবলী সংরক্ষিত থাকে। এই নির্দেশাবলীর মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) এ কপি হয়, যেটা এই তথ্যকে কোষের প্রোটিন তৈরির অংশে নিয়ে যায়। মেসেঞ্জার আরএনএগুলো (mRNA) খুব লম্বা হতে পারে।
জিন নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় হলো তার mRNA তৈরি বন্ধ করা। আরেকটি উপায় হলো mRNA-কে প্রোটিন তৈরির অংশে পৌঁছাতে না দেওয়া। উভয় ক্ষেত্রেই প্রোটিন তৈরি বন্ধ হয়ে যাবে।
মাইক্রোআরএন (MicroRNA) দ্বিতীয় পদ্ধতিতে কাজ করে। এরা মূলত ছোট RNA অণু, প্রায় ২০ বেস পেয়ার লম্বা, যা একটি বা একাধিক mRNA এর অংশের সাথে মিলে যায়। যখন একটি MicroRNA তার মিলে যাওয়া mRNA এর সাথে যুক্ত হয়, তখন সাধারণত সেই mRNA ভেঙে যায়। ফলে সেটি আর বার্তা নিয়ে যেতে পারে না; ফলে প্রোটিন তৈরি হয় না।
মাইক্রোআরএনএ (MicroRNA) সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কোষের ভেতর কাজ করে, তবে মাঝে মাঝে অন্যান্য অংশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য কোষ থেকে অন্য অংশেও যেতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে, এক জীব তার মাইক্রোআরএনএ ব্যবহার করে অন্য জীবকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সাধারণত রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ক্ষেত্রে ঘটে। সম্প্রতি এমন একটি ফাংগাস আবিষ্কৃত হয়েছে যা মাইক্রোআরএনএ ব্যবহার করে গাছের শিকড় তাদের বসবাসের উপযোগী করে।
অনেক গবেষক মাইক্রোআরএনএ ভিত্তিক চিকিৎসা নিয়ে কাজ করছেন, যদিও এখনো কোনো চিকিৎসা অনুমোদিত হয়নি। মাইক্রোআরএনএর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে।
অ্যামব্রোস এবং রাভকুন ১৯৯০-এর দশকে প্রথম মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন। এর নাম ছিল lin-4 এবং এটি একটি জিন নিয়ন্ত্রণ করত। প্রথমে, বিজ্ঞানীরা ভাবতেন যে এটি কেবলমাত্র কৃমিদের জন্য প্রযোজ্য, তাই এটি খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি।
২০০০ সালে, রাভকুন আরেকটি মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেন যার নাম let-7, যা পাঁচটি জিন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি বিভিন্ন প্রাণীতে পাওয়া যায়, যা বিজ্ঞান মহলে মাইক্রোআরএনএ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। এরপর থেকে হাজার হাজার মাইক্রোআরএনএ বিভিন্ন জীবে আবিষ্কৃত হয়েছে।
নোবেল অ্যাসেম্বলির সেক্রেটারি-জেনারেল থমাস পার্লম্যান জানিয়েছেন যে, তিনি রাভকুন এবং তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন এবং তারা নোবেল পুরস্কার পেয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত এবং স্টকহোমে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।
২০২৩ সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল হাঙ্গেরীয় বিজ্ঞানী ক্যাতালিন ক্যারিকো ও মার্কিন বিজ্ঞানী ড্রু ওয়াইজম্যানে, যারা mRNA-কে এমনভাবে পরিবর্তন করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন যাতে এটি শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার দ্বারা ধ্বংস না হয়। এই উদ্ভাবন mRNA ভ্যাকসিন, বিশেষ করে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের নিউজলেটারে এবং ফলো করুন আমাদের টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ফেসবুক-এ। এছাড়াও যুক্ত হতে পারেন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

এই নিবন্ধটি Creative Commons Attribution-NoDerivatives 4.0 International License-এর অধীনে লাইসেন্সকৃত। পুনঃপ্রকাশের জন্য পুনঃপ্রকাশের নির্দেশিকা দেখুুন।